ময়মনসিংহ শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরোনো ব্রহ্মপুত্র অপরিকল্পিত খনন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে ‘মৃতের চিৎকার’ ব্যানারে লিখে নদে নেমে তরুণদের প্রতিবাদ আমরা দেখেছি। অনেক আগে থেকে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ নামেও একটি আন্দোলন আছে। তারা নদ সুরক্ষায় সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খনন করেছে নদটি। কিন্তু এতে তেমন কোনো উপকার হয়নি। সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য অবৈধ স্থাপনায় বিপর্যস্ত এ নদ।
সংবাদমাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নিয়ে যে খবর পাওয়া যায়, সেগুলো যথার্থভাবে বুঝতে নতুন-পুরোনো ব্রহ্মপুত্রকে আলাদা করে চেনা প্রয়োজন আছে। নয়তো ধোঁয়াশা তৈরি হয়। ইতিহাস বলছে, ব্রহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৭৮৭ সালে টানা কয়েক মাসের ভারী বর্ষণে এর গতিপথে পরিবর্তন আসে। ওই বর্ষণের বিপুল জলধারা করতোয়া নদী ধারণ করতে পারেনি। বগুড়া দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া উজানে খাত পরিবর্তন করে এবং তিস্তা নদীর সৃষ্টি হয়।
তিস্তার জলধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত রচনা করে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। ব্রহ্মপুত্র তখন বিপুল জলরাশি নিয়ে খাত পরিবর্তন করে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে জোনাই নামে একটি ছোট নদে গভীর খাত সৃষ্টি করে ওই পথে প্রবাহিত হয়। তখন এর নাম হয় যমুনা। ময়মনসিংহ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ব্রহ্মপুত্রের পুরোনো যৌবন না থাকলেও প্রবহমান নদ হিসেবেই টিকে আছে। বর্তমানে জামালপুর, ময়মনসিংহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়।
ময়মনসিংহ শহরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, ৩৫–৪০ বছর আগে দেওয়ানগঞ্জে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে সংযোগ স্থানটি ব্রহ্মপুত্রের তলদেশের চেয়ে উঁচু হওয়ায় উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যায়। সেটি আর উন্মুক্ত করা হয়নি।