একটি শিশুর জন্ম হলে ওই পরিবারের সামগ্রিক জীবনধারাতেই আসে নানা অদলবদল। একদিকে তা বইয়ে দেয় আনন্দের ফল্গুধারা, অন্যদিকে বাড়িয়ে দেয় দায়িত্ব। ধাপে ধাপে বড় হয় শিশু। শিশুর বৃদ্ধি কতটা হবে, অনেকগুলো বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করে। আমিষ, ভিটামিন ও জিংকের মতো পুষ্টি উপাদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দরকারি শরীরচর্চা। না, না আটঘাট বেঁধে শিশুকে ব্যায়াম শেখাতে হবে না। শিশুর স্বাভাবিক উচ্ছল জীবনের হুটোপুটি, ছোটাছুটির কথাই বলা হচ্ছে। বয়স অনুযায়ী শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রমই শিশুর জন্য শরীরচর্চা। এই যেমন সাইকেল চালানো ও ঝুলে থাকার মতো কাজ শিশুর বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। শিশু গর্ভে থাকাকালে সে মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ, বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) তাসনুভা খান।
শিশু ঠিকঠাক বাড়ছে তো?
‘আমার বাচ্চাটা বোধ হয় ঠিকঠাক বাড়ছে না’, এমন অনুযোগ অনেক মা-বাবাই করে থাকেন। তাসনুভা খান বলেন, শিশুর বৃদ্ধির নিজস্ব গতি রয়েছে। আর এটাও মেনে নিতে হবে, সবাই সমান লম্বা হবে না। একইভাবে সব শিশুর স্বাস্থ্যও এক রকম হবে না। পরিবারের অন্যদের উচ্চতা কম হলে শিশুর উচ্চতাও কম হতে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে বা শিশু কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে, তার প্রভাবও উচ্চতায় পড়ে। তবে ঋতুমতী হয়ে যাওয়ার পর মেয়েদের উচ্চতা আর খুব একটা বাড়ে না। ছেলেদের উচ্চতা অবশ্য ১৮ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ থাকে। বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে কোনো দ্বিধা হলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকা ভালো। অহেতুক ভয় থাকলে সেটিও কেটে যাবে।
মনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রশিদুল হক জানালেন, শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে সে কেমন মানুষ হবে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক গঠনে সে কতটা পারদর্শী হয়ে উঠবে—এসবই সে কীভাবে বেড়ে উঠছে, তার ওপর নির্ভর করে। স্নেহ, আদর, স্পর্শ শিশুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জন্মের পর থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ। ধাপে ধাপে একটি শিশুর বিকাশ হতে থাকে। তাই যেকোনো বয়সী শিশুর প্রতিই মনোযোগী থাকতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে, তার মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে হবে। শিশুকে ডিজিটাল মাধ্যমে নির্ভরশীল হতে দেবেন না; বরং বয়স উপযোগী শব্দের খেলা, পাজল, রুবিকস কিউব, এমনকি ঝুনঝুনিও শিশুর বিকাশের জন্য ইতিবাচক।
সুষম পুষ্টি
বৃদ্ধি ও বিকাশ—দুটির জন্যই পুষ্টি চাই ঠিকঠাক। বিশেষত ৩-৬ বছর বয়সী শিশুর নিজের প্রতি কেজি ওজনের জন্য দেড় গ্রাম করে আমিষ খেতেই হবে রোজ। অর্থাৎ ১৪ কেজি ওজনের এই বয়সী শিশুর চাই ২১ গ্রাম আমিষ।