আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। যে মহান নেতা আজীবন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, যাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে, পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ফাঁসির হুকুম দিয়েও যাঁকে মারতে পারেনি, তিনিই কিনা নিহত হলেন তাঁর দেশের মানুষের হাতে। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মহা ট্র্যাজেডির দিন।
সেদিন ঘাতকেরা কেবল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে শিশু শেখ রাসেলসহ পরিবারের সব সদস্যকে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। কিন্তু জাতি হিসেবে যেভাবে এই ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কথা ছিল, সেভাবে প্রতিবাদ হয়নি।
তাই ১৫ আগস্ট শোকের সঙ্গে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসারও দিন। এরপর ৩ নভেম্বর দেশত্যাগের প্রাক্কালে ঘাতক চক্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বশূন্য করে ফেলা ছিল ঘাতক চক্রের উদ্দেশ্য।
১৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীতে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটতে থাকে। তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে ৩ নভেম্বর। এ শাসন স্বল্পস্থায়ী হলেও তিনি ও তাঁর অনুসারীরা খুনি চক্রকে দেশত্যাগ ও রাষ্ট্রপতি পদ থেকে খন্দকার মোশতাক আহমদকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। নতুন রাষ্ট্রপতি হন প্রধান বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম। ৭ নভেম্বর কথিত সিপাহি-জনতার বিপ্লবে খালেদ মোশাররফ নিহত হন। এরপর ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসেন জিয়াউর রহমান।
ক্ষমতা গ্রহণের ৮৩ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশত্যাগে বাধ্য হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অপচ্ছায়া থেকে গেছে বহুদিন। খন্দকার মোশতাক আহমদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রুদ্ধ করে দেন। জিয়াউর রহমানের আমলে এই ইনডেমনিটি জাতীয় সংসদে আইনি বৈধতা পায়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর সরকার খুনিদের বিদেশে কূটনীতিকের চাকরি দেয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমল পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। এটা ছিল দেশ ও জাতির জন্য যারপরনাই লজ্জাজনক।