‘সন্তানদের মানুষ করতে জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটিয়েছি। ইচ্ছা ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেটি সম্ভব হয়নি। তবু কখনো হতাশ হইনি। তবে এখন জঙ্গির খাতায় নাম দেখে বড় হতবাক লাগছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে গত শনিবার জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ১০ জনের একজন রাফিউল ইসলামের (২২) বাবা সাইফুল ইসলাম এসব কথা বলছিলেন।
রাফিউলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও রেবা সুলতানা দম্পতির ছেলে। তাঁর বাবা দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন আর মা মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রাফিউল বড়।
রাফিউলের পরিবার জানায়, তিনি ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০২০ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। বুয়েট, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। তবে তিনি কোনোটিতেই সুযোগ পাননি। পরে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে শহীদ এম মনসুর আলী সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক (সম্মানে) ভর্তি হন রাফিউল। পড়ালেখার পাশাপাশি আট মাস আগে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে পাবনা শহরতলির তালিমুল একাডেমি নামে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। সেখানেই একটি কক্ষে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে থাকতেন।
রাফিউলের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ৪ আগস্ট সকালে পাবনার তালিমুল একাডেমিতে যাওয়ার কথা বলে রাফিউল বাড়ি থেকে বের হন। মাকে বলেন, আলাদা কোচিং সেন্টার খুলবেন। দু-এক দিনের মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে যেতে পারেন। মুঠোফোনে না পেলে যেন চিন্তা না করেন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ছেলে যেদিন চলে গেল, সেই রাতে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। আমাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে সাত দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। তখন ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে অসুস্থতার সময় কাছে পাইনি। এখন জঙ্গিদের সঙ্গে দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’