মানুষ যেকোনো সূর্যোদয় থেকে দিবাবসান পর্যন্ত একটি বার্তার জন্য অপেক্ষা করে। কখনো সেই বার্তা বেদনায় বিষাদময় অথবা কোনো সুসংবাদ। যদিও পৃথিবীতে এমন কিছু মানবগোষ্ঠী থাকে, যাদের কাছে নিত্যদিনের বার্তাই একটা অশনিসংকেত। প্রতিদিনই ভূমি থেকে উচ্ছেদের সংবাদ, জমি হারানোর সংবাদ, প্রিয়জনের দেশত্যাগের সংবাদ। বহু বছর ধরে বিরামহীনভাবে এই হয়ে আসছে। এই গোষ্ঠীর নিবাস প্রকৃতির মধ্যে, সংখ্যা গণনার অতি প্রত্যুষ থেকে। তাই তার পরিচয় ‘আদিবাসী’।
তাদের বিবেচনায় এই ধরিত্রীই তাদের মা। তারা যেমন ধরিত্রীর সন্তান, তেমনি প্রাণিজগৎও তাদের আত্মীয়। বসবাসের জন্য তারা ছোট্ট এক টুকরো ভূমি আর আহারের জন্য বিস্তীর্ণ বনানীকে আবাসযোগ্য করেছিল এই পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় একসময় ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে, নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে, এল মানুষ-ধরার দল, গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে...’। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
কিন্তু এই মানুষগুলো অনন্তকাল ধরেই হিংস্র জন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে। ওদের সাহস তুলনাহীন। তাই এবার প্রয়োজন হলো অন্য কৌশলের। ধর্ম এবং কানুনকে ব্যবহার করে তাদের করায়ত্ত করা হলো। ওরা হারাল অনেক কিছু, বিশেষ করে জমি, বাসস্থান, বন, পাহাড়, নদীসহ প্রকৃতির ওপর অধিকার। জমির মালিকানায় শত সহস্র বছরের অধিকার টিকল না। তার স্থলাভিষিক্ত হলো নানা ধরনের আইন। এই সরল প্রাকৃতিক মানুষদের কাছে কাগজ খুবই দুর্বোধ্য। তাই সহজেই বারবার বাস্তুচ্যুত হলো এই মানুষগুলো।