‘‌একটা গোষ্ঠী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়েও বেশি লুট করছে’

বণিক বার্তা বদরুদ্দীন উমর প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৪৮

দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।


দেশের সব ব্যাংক এখন পরিচালিত হচ্ছে সুবিধাভোগী লোকজনের দ্বারা। ডজন ডজন ব্যাংক এসেছে, যা জনগণের সম্পদ লুটপাটের বন্দোবস্ত। লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো থেকে তছরুপ হয়েছে। দিন কয়েক আগেই খবরের কাগজে বেরিয়েছে, এস আলম বলে যে গ্রুপ আছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন দেশে কোম্পানি তৈরি করেছে এবং সম্পদ গড়েছে। এছাড়া গার্মেন্ট মালিকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বিদেশে নিয়মবহির্ভূতভাবে সম্পদ গড়েছে। ওয়াসার এমডিকে সাতবারের মতো নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নানা অনিয়ম নিয়ে রিপোর্টও এসেছে। তাকে সরিয়ে না দিয়ে তাকে যে সমালোচনা করেছিল বোর্ডের সেই চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাজ যারা করছে, তাদের সঙ্গে এমডি ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে। এ কথা কে অস্বীকার করতে পারবে? কাজেই এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দলের সম্পর্ক হয়েছে। 


এখানে বর্তমানে এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে ব্যবসায়ী বা শিল্প মালিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক লোকেরাও অর্থ আত্মসাৎ করছে, পাচার করছে। পাচারকৃত সে টাকা বিদেশে জমা হচ্ছে। তাদের পাচারের ধরন এমন যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় লর্ড ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে আঠারো ও উনিশ শতকে যে লুট হয়েছিল সেটির সঙ্গে এটি তুলনীয়। বরং বর্তমান পরিস্থিতি সেই লুটের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ একটা খুব উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো ইংরেজ লুটপাটকারীরা বিদেশের টাকা লুটপাট করে তাদের নিজ দেশে পাঠাত। আর এখনকার এ বাংলাদেশী লুটপাটকারীরা নিজ দেশে লুটপাট করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। কাজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। যে সাম্রাজ্যবাদীদের আমরা দোষারোপ করি, তাদের চেয়েও এরা দেশের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। 


এখানে মেগা প্রজেক্ট মানে মেগা তছরুপ। মেগা প্রজেক্টের জন্য যে ধার করা হয়েছে, এ ঋণ এখন উত্তরোত্তর বেশি শোধ করতে হচ্ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যদি চলেও যায় এ মেগা প্রজেক্টের ধকল পরে যারা আসবে, তাদের ওপর দিয়ে যাবে। একদিকে মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে অন্যদিকে দেশের মানুষের চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। দেশের ব্যবসায়ীসহ অন্যরা লুটপাট করছে। এ লুটপাটের বড় রকম অংশীদার যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা। এ ধরনের হাজার হাজার লোক লুটপাট করে বিদেশে সম্পত্তি বানাচ্ছে। 


স্বাধীনতার আগে নির্বাচনগুলোয় সব পক্ষকেই ফলাফল মেনে নিতে দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে সংকট কাটছে না কেন?


আইয়ুব খান যখন সামরিক অভ্যুত্থান করেছিল তখন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনীতিবিদরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে নিন্দিত হয়েছিল। সেই কোন্দলের জেরে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্টও সরকার গঠন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টির বিবাদের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যারা ১৯৫৪ সালে তাদের ভোট দিয়েছিল, তারাও বিপক্ষে চলে গেল। রাজনীতিবিদদের এ অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আইয়ুব খান ক্ষমতায় এলেন। 


ইয়াহিয়া খানের সময় অবস্থা অন্য রকম ছিল। ’৬৯ সালের বিশাল গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া। তখন ইয়াহিয়ার তো রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বলার মতো কিছু ছিল না। সে সময় বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে। কাজেই এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নির্বাচন দিতে হয়েছিল। তখন দেশের যে অবস্থা ছিল তাতে নির্বাচনে কারচুপি করার বিশেষ অবস্থা ছিল না। 


আরেকটা বিষয় হলো যা কিছুই হোক, পাকিস্তানিরা বাংলাদেশীদের ভয় করত। কিন্তু বাংলাদেশীরা তো নির্ভয়। কারণ তারা মনে করছে দেশ তাদের, তারা দেশের মালিক, যা ইচ্ছে তা-ই করবে। পাকিস্তানিরা তো বিদেশীর মতো ছিল। কাজেই এরা এখানে এসে যে জুলুম করেছে, সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে ভয় ছিল। আইয়ুব খানও যে নির্বাচন করেছে, তাতেও কারচুপির কোনো অভিযোগ ছিল না। নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সে এক রকম তৈরি করেছিল, কিন্তু নির্বাচনে কোনো রকম দমন-পীড়নের সাহস করেনি। 


আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদনে নির্বাচন কমিশন কতটুকু সক্ষম?


নির্বাচন কমিশন এখানে অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার। এখন নির্বাচন কমিশন মানে ক্ষমতাসীনদের একটি অঙ্গ। তাই নির্বাচন কমিশনের আলাদা কোনো স্বতন্ত্র ভূমিকার কথা চিন্তা করা যায় না। ভারতে যেমন সাংবিধানিক একটা ব্যবস্থা আছে, সাংবিধানিকভাবে তা কাজ করে। এখানে তো স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনো উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধায় একটা নির্বাচন খারিজ করল। তাই ক্ষমতাসীনরা মনে করল তাদের অধীন হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনার কিছু নড়াচড়া করছে। এটা বন্ধ করতে তারা আবার আইন করেছে যে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। বাতিল ঘোষণা করতে পারবে না। এটা তো আশ্চর্যজনক বিষয়! নির্বাচন কমিশন এখানে যে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার, সরকারি সিদ্ধান্তই যে সার্বভৌম, তা-ই এসবের দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচন কমিশন বাতিলের জন্য বলছে। আসলেই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে এমন নির্বাচন কমিশন ও কমিশনার থাকতে হবে, যারা কোনো দলের প্রতিনিধি নয় বা যারা কোনো দলের হুকুম তামিল করে না। কাজেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে এ নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন করতে হবে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us