দেশজুড়ে ভূমি কিংবা আত্মপরিচয়ের অধিকারের লড়াইয়ে আদিবাসী তরুণরাই সর্বদা অগ্রণী হয়েছে। লোগাং গণহত্যার পর ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে গর্জে উঠেছিল পাহাড়ের বঞ্চিত তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুঁথি মেলালে দেখা যায়, আদিবাসী তরুণরাই তীর-ধনুক নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন রংপুর সেনানিবাসে। তেভাগা কিংবা টংক আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের গরিষ্ঠভাগই তরুণ সাঁওতাল ও হাজং।
চলতি আলাপখানি আদিবাসী তারুণ্য এবং সমাজ রূপান্তরে আদিবাসী যুবদের অবিস্মরণীয় অবদান নিয়ে। এবারের বিশ্ব আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আদিবাসী তরুণ’। প্রতিপাদ্যটির বাংলা করা হয়েছে, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি’।
দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ত্রিশ ভাগ যুব-তরুণ। যদিও এই যুবদের কতভাগ আদিবাসী বা দেশে আদিবাসী তরুণের সংখ্যা কত তা আমাদের জানা নেই। কাঠামোগত বৈষম্য, নয়াউদারবাদী বাজার কিংবা শ্রেণিবিবাদের কারণে হয়তো দেশের গরিষ্ঠভাগ তরুণ সমাজই কোনো না কোনোভাবে বিপদাপন্ন। কিন্তু আদিবাসী তরুণদের জাতিগত নিপীড়ন সামাল দিয়ে বাঁচতে হয়, যে অভিজ্ঞতা আবার দেশের গরিষ্ঠভাগ তরুণের নেই। অথচ আদিবাসী তরুণরা এই ভূগোল, দেশ ও ইতিহাসের বহু চিত্রবিচিত্র কাহিনির কারিগর ও নির্মাতা। এই তারুণ্য ইতিহাসের কোনোকালেই নতজানু ও ভঙ্গুর হয়নি। বিশ্বাস করি এই সময়েও হবে না। আদিবাসী তরুণরাই আত্মপরিচয়ের তর্ককে রাষ্ট্রের পাবলিক জিজ্ঞাসায় পরিণত করবে। আদিবাসী আত্মপরিচয়ের দ্রোহী তারুণ্যের কিছু ঐতিহাসিক রক্তটিকা স্মরণ করছে চলতি আলাপ।