মেঘালয় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালুতে নেত্রকোণার কলমাকান্দা সীমান্তের গারো পাহাড়ের পাদদেশের অনেক জমি ভরাট হয়ে কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে; তাতে বিপদে পড়ছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মান্দি ও হাজংরা।
প্রায় দুই দশক ধরে চলা এই বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে বন্য হাতির উপদ্রব। বালু পড়ে জলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানির সঙ্কট তো রয়েছেই।
জমি-জলা-জঙ্গল-পাহাড় আর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে টিকে থাকা সীমান্তবর্তী এসব নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা বিরূপ পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। বাপ-দাদার ভিটেমাটির মায়া ছাড়তে না পেরে যারা পাহাড়ের কোলে রয়ে গেছেন, তাদের জীবন হয়ে উঠেছে কষ্টের।
কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের তকলাইবাড়ি গ্রামের দিনমজুর জেমস সাংমা (৪০) বলছিলেন, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশের মেঘালয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা করার পর থেকেই বালু আসছে বেশি। উজানের ঢলের সঙ্গে নদী ও ছড়া দিয়ে আসা বালুতেই দিনে দিনে জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই আগাম বন্যা হচ্ছে।
“পাহাড়ের গাছ কাইট্যা শেষ। আদিবাসীরার জীবন তো এইবায় বালুতে, বন্যায় আর বন উজাড়ে আটকে যাচ্ছে। যতই দিন যাইতাছে ততই কঠিন অইতাছে। চোখের সামনেই দুই-তিন দশকে এই দশা হইছে। পাহাড়ে অহন টিকাডা কঠিন অইয়া পড়ছে।”
দুর্গাপুর খনিজ সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বিরিশিরি কালচারাল অ্যাকাডেমির সাবেক পরিচালক স্বপন হাজং বলেন, “গত দুই-তিন দশকে টিলার মাটি অবাধে ও অপরিকল্পিতভাবে কাটায় বিপিনগঞ্জ গ্রামের অর্ধশতাধিক হাজং পরিবার এলাকা ছেড়ে গেছে। পাহাড়ি বন-জঙ্গল বলতে যা বোঝায়, তা আর নেই। টিলাগুলো ন্যাড়া হয়ে আছে। বনজঙ্গল ঘিরেই আদিবাসীদের জীবন-জীবীকা। এ অবস্থায় আর কতটুকু ভালো থাকা সম্ভব।”