ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা করেছিলেন। ১৮ মাসেও সে রকম না হতে দেখে অনেকে বিস্মিতও। এ রকম সবার জন্য পশ্চিম আফ্রিকার সর্বশেষ ঘটনাবলি মনোযোগ দাবি করছে। প্রকাশ্য ও গোপনে ইউক্রেনে যাঁরা যুদ্ধরত, মোটামুটি সে রকম সব পক্ষ আফ্রিকায়ও বড় এক যুদ্ধের ছক সাজাচ্ছে এখন। একে ইউক্রেন বিবাদের আফ্রিকা সংস্করণ বলা হচ্ছে। যার আঁচ লাগছে পরোক্ষে বাংলাদেশের গায়েও। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কর্মসূচি বড় আকারে গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে সেখান থেকে।
কী ঘটছে পশ্চিম আফ্রিকায়
৫৪ দেশের বিশাল আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত পশ্চিমাংশে। সেদিকে আছে প্রায় ১৫-১৬টি দেশ। আরবিতে এই অঞ্চলকে ‘সাহিল’ও বলা হয়।
বিশ্বজুড়ে এ এলাকার পরিচিতি ‘কু বেল্ট’ বা সামরিক অভ্যুত্থান উপদ্রুত অঞ্চল হিসেবে। ‘ক্যু’ এখানকার ‘ভাইরাল’ আইটেম। সর্বশেষ যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে এখানে নাইজার ও মালির সামরিক অভ্যুত্থানকে ঘিরে।
নাইজার স্বাধীন হয় ১৯৬০ সালে। তারপর বহুবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে এখানে। সফলভাবে হয়েছে পাঁচবার। সর্বশেষ ২৬ জুলাই এক অভ্যুত্থানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোমকে উৎখাত করেন তাঁর পাহারাদার বাহিনীর কর্মকর্তা আবদোরাহমানে চিয়ানি। পাশের দেশ মালি এই অভ্যুত্থানের সমর্থক। একই সময়ে স্বাধীন হয়েছিল এই দুই দেশ। অনেক বিষয়ে তাদের মিল। স্বাধীনতার পর গত প্রায় ছয় দশকে মালিতেও শান্তিতে ক্ষমতার বদল হয়েছে মাত্র একবার।
এসব পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান এত দিন গতানুগতিক ঘটনা হিসেবে থাকলেও এবার সেটি থাকছে না। কারণ, এখনকার ক্যুতে পরোক্ষে যুক্ত হয়ে পড়েছে রাশিয়া। ক্ষমতা হারাচ্ছে ইউরোপ-আফ্রিকার স্থানীয় বন্ধুরা। আফ্রিকার পুরোনো প্রভু ফ্রান্সের জন্য এ অবস্থা সহনীয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রেরও সে রকম অনুভূতি।
মালি ও নাইজারের রাশিয়ামুখী অভ্যুত্থান সামাল দিতে পাশের দেশ ফ্রান্সপন্থী নাইজেরিয়া বলছে, তারা ওদিকে সামরিক হস্তক্ষেপ চালাবে। সেনেগাল বলছে, তারাও নাইজেরিয়ার সঙ্গী হবে। পশ্চিমের সমর্থক আফ্রিকার শাসকেরা ইতিমধ্যে নাইজার ও মালির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নাইজেরিয়া থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় নাইজারের বহু এলাকা স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে।