মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলার তথাকথিত অপরাধে খুলনায় বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭, খুলনা জেলা চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন এবং দুই ঘণ্টা হাত বেঁধে অবরুদ্ধ করে রাখেন এলাকার এক মৌলবাদী পরিবারের সদস্যরা। তাঁর অবস্থা গুরুতর।
খবরে প্রকাশ, বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন। স্থানীয় সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে তিনি এবং এলাকার অন্য নারী ফুটবলাররা ফুটবলের অনুশীলন করে থাকেন। সেখানে এসে নূপুর খাতুন নামে প্রতিবেশী এক মেয়ে তাঁর ছবি তোলেন; অতঃপর সাদিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবাকে দেখান এবং বাজে মন্তব্য করেন।
দুদিন পর গত শনিবার সাদিয়া নাসরিন এর প্রতিবাদ জানালে নূপুর তাঁকে চড়-ঘুষি মেরে জখম করেন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানাতে সাদিয়ার মা-বাবা ক্লাবের কোচ মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক ও অন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে নূপুরদের বাসায় যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূপুরের বাড়ির লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এই ঘটনায় ফুটবলার মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল আহত হন। সাদিয়া জানান, তাঁদের লোহার রড দিয়ে হামলা ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
এই অসভ্য, বীভৎস ও ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। দেশে যেখানে নারী ফুটবলই গর্ব করার মতো একটি ক্ষেত্র, সেখানেই মৌলবাদীদের আঘাত! অত্যন্ত বিরুদ্ধ একটি পরিবেশে এ দেশের নারী ফুটবলাররা সংগ্রাম করে চলেছেন। এর মধ্যে এই বীভৎসতা।
তাঁরা ভয়ে আছেন। কতটুকু বয়স তাঁদের? দ্বাদশ শ্রেণির দ্বার অতিক্রম করেননি। তাঁরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ। একেকজন একেক দিকে, যাঁর যেটাতে আগ্রহ, সেটায় তাঁদের জীবন গড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। এই নারী ফুটবলারদের প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে ফুটবল খেলায়—যেখানে তাঁদের প্রচণ্ড অনুরাগ। কোন নাগরিকের কোন বিষয়ে আগ্রহ বা অনুরাগ তা অন্য কোনো নাগরিকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীড়নক হতে পারে না।
প্রশ্ন জাগে, কারা এটা শেখাচ্ছে? এই পরিবারটিকে অথবা এই মানুষগুলোকে কে পরামর্শ দিয়েছে যে মেয়েরা ফুটবল খেললে তাঁকে শাসাতে হবে, শায়েস্তা করতে হবে? অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটা শুধু ফুটবল খেলা বা না-খেলার ব্যাপার নয়, এটা নারী স্বাধীনতার সঙ্গেও যুক্ত। পাশাপাশি সমাজের শৃঙ্খলার সঙ্গেও বিষয়টি যুক্ত।