সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে যে বন্যা পরিস্থিতি আমরা দেখলাম তার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সতর্ক হওয়ার জায়গা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এখন আর পৃথিবীতে এর সম্ভাবনা বা এ থেকে সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তেমন দ্বিমত নেই। বিশ্বে আলোচনাটা দুটি ধারায় হয়। একটি বিজ্ঞানভিত্তিক। আরেকটি রাজনীতি-কেন্দ্রিক, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে যে কী করতে হবে। কিন্তু এর ভিত্তি রচিত হয় বিজ্ঞানের আলোকে। বিশ্বের সব দেশের পাঁচ-ছয় হাজার বিজ্ঞানীদের একটা বড় দল এ বিষয়ে তাদের যে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দেন তার ভিত্তিতে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। এই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। এক. উচ্চ তাপমাত্রা অনেক দিন ধরে থাকতে পারে। দুই. নিচু তাপমাত্রা মানে ঠান্ডা শীতের সময় কিংবা প্রতিদিনই তো দুপুর-বিকেলে প্রচন্ড গরম পড়ে আবার ভোরের দিকে ঠান্ডা পড়ে। এই ঠান্ডার ফিগারটা বেড়ে যেতে পারে। মূল কথা হচ্ছে গিয়ে, ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন ১ দশমিক ২ ডিগ্রি গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এবং পৃথিবী রাজনৈতিকভাবে প্রতিজ্ঞা করেছে যে এটা দুই ডিগ্রির ওপরে উঠতে দেবে না। কারণ গড় তাপমাত্রা এর ওপরে উঠলেই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের বিপদ, বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়বে। এটা ২০৩০ নাগাদ দেড় ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে। ২০৪০/৫০ নাগাদ দুই ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে।
তাহলে, এ পরিস্থিতিতে কী আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা, সেটা এখন বলা দরকার। প্রথম কথা হচ্ছে বাতাসের সার্কুলেশন যেটা, যার মাধ্যমে আমাদের ঋতুপরিক্রমা হয়, সেটা বদলে যাবে। আজকে শ্রাবণ মাসের ২৪ তারিখ। অর্থাৎ ঘোর বর্ষার সময়। আমাদের বর্ষাটা হচ্ছে জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত। সে অনুযায়ী এখন তো বর্ষার চূড়ান্ত প্রভাব থাকার কথা। কিন্তু দুই-তিন দিন আগ পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল না, এখন যা টুকটাক হচ্ছে সেটাই বর্ষার বৃষ্টির মতো না। কয়েক দিন আগে এমন খবরও পাওয়া গেছে যে, পাটচাষিরা ডোবা-নালায় পাট পচানোর পানি পাচ্ছিলেন না। এই হচ্ছে অবস্থা। অর্থাৎ বর্ষার মাঝামাঝি পার হওয়ার পর বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় ঘটনা যেটা ঘটবে উচ্চ তাপমাত্রা প্রচুর আসবে। যেটাতে এখন আমেরিকা কিংবা ইউরোপ ভুগছে। গ্রিসে এত গরম পড়েছে যে জঙ্গলে আগুন লেগে গেছে। পর্তুগাল, স্পেন, ইতালিতে ১১০ থেকে ১১৫ ডিগ্রি ফরেনহাইট তাপমাত্রা দেখা গেছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাসে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেছে। যেটার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমরা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি তাপমাত্রা সপ্তাহ দুই-তিন আগেও অনুভব করেছি।