তারা ভেবেছিল, স্টেনগানের বুলেটে শরীর ছিন্নভিন্ন করে চিরতরে মুছে ফেলা গেছে শেখ কামালের নাম। ভুল।
তারা ভেবেছিল, গোয়েবলসীয় কৌশলে মিথ্যার ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে সত্যকে সরিয়ে দেওয়া গেছে। কলঙ্কে ঢেকে দেওয়া গেছে শেখ কামালের নাম। মহা ভুল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবুল ফজল। এরপরে কোনো এক অনুষ্ঠানে তিনি শেখ কামালের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন আদর্শবান মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিল না। অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন তিনি।’ এই মন্তব্যের কয়েকদিনের মধ্যেই আবুল ফজল জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারিত হন।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় এসেই ক্রীড়াঙ্গনে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে। ঢাকার কমলাপুরে নির্মিত হয় একটি স্টেডিয়াম, যার নামকরণ হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আসার পর ওটার নাম আংশিক বদলে করা হয় শহীদ সিপাহী মোস্তফা স্টেডিয়াম।
কেন এমন করা হলো, জানতে চাইলে সেই সময়ের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল বলেছিলেন, ‘আমরা অনেক খোঁজখবর করে জানতে পেরেছি মোস্তফা কামালের আসল নাম মোহাম্মদ মোস্তফা। সুতরাং নামটা সংশোধন করেছি মাত্র।’
আসলে কামাল নামটিতেই তখনকার শাসকদের যত জ্বালা ছিল। ওই নামটিকে তারা ভয় পান, সহ্য করতে পারেন না। শেখ মুজিব নামে যেমন ভয়, তার জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল নামটাও তো তেমন ভয়েরই কারণ।
তবে শেখ কামালকে মুছে ফেলা যায়নি। সব অপচেষ্টাই নিষ্ফল হয়ে গেছে ইতিহাসের অমোঘ সূর্যালোকে।
ইতিহাসকে কেউ কখনো নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারে না। সবসময় সত্যের ফল্গুধারাতেই ইতিহাস বয়ে চলে। আর ইতিহাস তার নায়কদেরই মনে রাখে চিরকাল। শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল একজন নায়ক হয়েই চিরকাল বেঁচে থাকবেন বাঙালির স্মৃতিতে।