১৯৯৩ সাল। কোনো এক দুপুরে ময়মনসিংহ থেকে চলে এলাম ঢাকা। উদ্দেশ্য ভোরের কাগজ। সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দু’চোখে। পরিচিত ছিল একজন। তিনি সঞ্জীব চৌধুরী। একদিন চলে এলাম অফিসে। দেখা করলাম তার সঙ্গে। বললেন, একটা কাজ করেন। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া আমারে হেল্প করেন। এই যে শত শত খাম দেখতাছেন, সারাদেশ থিকা পাঠকরা পাঠাইছে। এইগুলা খোলেন। যেগুলা কোনো কামের না, ফালাইয়া দিবেন। এ রকম ২৫টা লেখা আমারে দিবেন। এইডা কিন্তু প্রতিদিন নিয়মিত দিতে হবে। কোনো বেতন নাই! অবশ্য দুপুরে আমার সঙ্গে খাইতে পারবেন। সেইটা আমি দায়িত্ব নিলাম। মহানন্দে বললাম, আচ্ছা। এর কয়েকদিন পর, মতিউর রহমান তার রুমের দিকে যাওয়ার পথে আমাকে দেখলেন। সঞ্জীব চৌধুরীর উদ্দেশে বললেন সঞ্জীব, ও কে?
ওর নাম তাপস। ৩ কলামে ফিচার ছাপা হইছে পত্রিকায়।
মতিউর রহমান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, রুমে আসো। সঞ্জীব, ওকে নিয়া আসো। তিনি হন হন করে চলে গেলেন। সঞ্জীব দা, সম্পাদকের রুম দেখিয়ে বললেনÑ একদম চুপ থাকবেন। তিনি যা বলবেন, তার উত্তর ছাড়া কিছু বলবেন না।
সম্ভবত সেদিন ফুলহাতা পাঞ্জাবি পরেছিলেন মতিউর রহমান। সরাসরি মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন তোমার নাম ঠিকানাটা লিখে দাও।
কোনটা? ময়মনসিংহ নাকি টাঙ্গাইল?
আরে না, ঢাকার।
এখানে কোনো ঠিকানা নেই। বন্ধুদের সঙ্গে মেসে থাকি।
কোথায়?
ফকিরাপুল।
গুড। ঐটাই লেখো। শোন, ফয়েজ আহ্্মদ আর পান্না কায়সারকে চিনো?
না। কিন্তু তাদের লেখা পড়েছি।
কোথায়?
ভোরের কাগজেই।
আচ্ছা। তুমি এখনই পান্না ভাবীর বাসায় যাও। তার একটা লেখা আনতে হবে। বাসা চিনো?
না। ঢাকার কিছুই চিনি না।
তুমি এইখান থেকে রিকশা নিবা। ২০ টাকা নিতে পারে। সরাসরি তার বাসায় যাইবা। ইস্কাটনে বাসা। সেখানে গিয়া কাউকে বলবা, অভিনেত্রী শমী কায়সারের বাসা কোথায়? ওর মা হচ্ছে, পান্না ভাবী। শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী। ১০০ টাকা দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি যাও। তিনি আবার বাসায় থাকবেন না। লেখাটা আজই ফরিদকে দিবা।