এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি বলে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে জানা গেছে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। কাগজপত্রে আরও দেখা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে এস আলমের কেবল দুটি হোটেল ও একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনা ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে আরও দেখা যায়, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়।
বিদেশে এস আলমের বিনিয়োগ সম্পর্কে জানতে ডেইলি স্টার বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
বিদেশে বিনিয়োগ দাপ্তরিকভাবে কোনো গোপনীয় বিষয় নয়। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এস আলম তাদের কাছ থেকে কখনো বিদেশে অর্থ নেওয়ার কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।
তাদের মধ্যে একজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এস আলম বিদেশে অর্থ পাঠানোর জন্য কোনোদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়নি।' অন্য দুই জনও এই তথ্য আলাদাভাবে নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড এবং যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড।
১৯৮৫ সালে সাইফুল আলম এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তখন থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
তার ব্যবসার পরিধি পণ্য বাণিজ্য থেকে মাছ ধরা, নির্মাণ সামগ্রী থেকে আবাসন ব্যবসা, টেক্সটাইল থেকে মিডিয়া, আন্তঃনগর বাস থেকে শিপিং এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ থেকে ব্যাংকিং, বীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।