২০২৩ সালের জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা মেনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার আইএমএফ প্রবর্তিত সর্বশেষ পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বহুদিন থেকে এ ব্যাপারে আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল, কিন্তু রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের নির্দেশনা মানছিল না।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, কিন্তু আইএমএফ ওই ঘোষণা মেনে নেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওই ঘোষিত রিজার্ভ থেকে রফতানি উন্নয়ন ফান্ডের (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) মাধ্যমে প্রদত্ত সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিজেদের রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে যে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে তাও বাদ দিতে হবে। আরো বাদ দিতে হবে রিজার্ভ থেকে পায়রা বন্দরের বামনাবাদ চ্যানেল খননের জন্য এবং বাংলাদেশ বিমানকে বিমান কেনার জন্য যে ঋণ দেয়া হয়েছে সে অর্থও। এটা খুবই দুঃখজনক যে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দেশের সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব আইএমএফের এসব আপত্তির ধার ধারেনি।
এখন যখন বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে তখন বাধ্য হয়ে ওই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার শর্ত পূরণের উদ্দেশ্যে রিজার্ভ হিসাব করার সর্বশেষ পদ্ধতি বিপিএম-৬ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ ধরনের বিলম্বের কারণে অর্থনীতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তার দায়ভার কে নেবে? পুরনো বিপিএম-৫ পদ্ধতি অনুসরণে যে ‘ইনফ্ল্যাটেড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ দেখানোর পাগলামিতে পেয়ে বসেছিল কর্তাব্যক্তিদের, তার ফলে গত দুই বছরে বেশ কয়েকটি অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সবচেয়ে ক্ষতিকর সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করে ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা বাস্তবায়নসংক্রান্ত খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। এরই মধ্যে এ ঋণগুলোর সিংহভাগই ‘ফোর্সড লোনে’ পরিণত হয়েছে। এর মানে এ ঋণগুলো আর কখনোই বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এর বেশির ভাগই স্রেফ বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন ঋণগ্রহীতা রফতানিকারকরা।