অর্থনীতির মূলধারায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশের সার্বিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত পিছিয়ে পড়া নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ শুধু ক্ষমতায়নই নিশ্চিত করে না; এর ফলে সংশ্লিষ্ট নারী এবং তার পরিবারকে মুক্ত করে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে নারীর ক্ষমতায়নে দেশ এগিয়েছে বহুদূর; তবে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডে মাঝামাঝি অবস্থানে হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশে লিঙ্গ বৈষম্য কমে আসার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন।
দেশে গত দশকজুড়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্ত করেছে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস। এ অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বেশি অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি কাজ সামলানো গ্রামীণ নারীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-এর মার্চ মাসে দেশে মোট এমএফএস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৭ কোটি, যার ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ৮ কোটি ৪১ লাখ হিসাব নারীর নামে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীরা এমএফএস হিসাব খোলার দিক থেকে শহুরে নারীর চেয়ে এগিয়ে। কেননা, শতাংশের হিসাবে নারী এমএফএস গ্রাহকের ৫৭ শতাংশ গ্রামে বাস করে। এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এমএফএসের মাধ্যমে আর্থিক সেবা বেশি পৌঁছেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। বর্তমানে দেশে ১৩টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।