‘মানুষেরা ভুলে গেছে/ সেদিন সূর্য উঠেছিল কিম্বা উঠে নাই/ সেদিন মানুষের স্বপ্নেরা খুন হয়েছিল/ স্বপ্নের লাশ পড়েছিল উদোম আকাশের নিচে।’ (বাবলু জোয়ারদার, ‘শবযাত্রার পাতাল ছায়া’ কবিতা থেকে)। কবি সেই ভয়ঙ্কর কালরাতের কথা বলছেন। ওই রাতে বাংলাদেশের হৃদয় রক্তরঞ্জিত হয়েছিল। যে দীঘল পুরুষের ডাকে ‘আরশোলারা মানুষ হয়ে যেত’, যার বজ্রকণ্ঠ বেজে উঠলে ‘ভূত-পেত্নীরা মুখ লুকাত/ পালিয়ে যেত দিগন্তের ওপারে’, তাঁকেই আচমকা আঘাত করে বিশ্বাসঘাতকেরা। সেই দীঘল পুরুষ ‘একদিন শ্রাবণ মেঘের অন্ধকারে/ হায়েনার নির্মম আঘাতে ...’ চলে গেলেন অভিমানে অনেক দূরে। আর তাই ‘নদীগুলো রক্তে ভরে গেল/ পাখিদের গান থেমে গেল।’ সেই অন্ধকার সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে ফের তার দেখা মেলে অনেক অনেক বছর বাদে। ১৯৯৬ সালের পর আবার আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ফিরে আসেন বাঙালির মনোজগতে। মাঝখানে খানিকটা আড়ালে পড়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু প্রবলভাবে ফিরে আসেন ২০০৯ থেকে। তবে তার আগেও তিনি ছিলেন আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে।
আর এখন তো বঙ্গবন্ধু আমাদের ভরসার বাতিঘর। রবীন্দ্রনাথ তার লক্ষ্য ও শিক্ষা প্রবন্ধে লিখেছিলেন- ‘...আমাদের জীবনে সুস্পষ্টতা নাই। আমরা যে কী হইতে পারি, কতদূর আশা করিতে পারি, তাহা বেশ মোটা লাইনে বড় রেখায় দেশের কোথাও আঁকা নাই। আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্রবল করিয়া তোলে। প্রকৃতির গৃহিণীপনায় শক্তির অপব্যয় ঘটিতে পারে না। এই জন্যে আশা যেখানে নাই শক্তি সেখান হইতে বিদায় গ্রহণ করে।’ বহুকাল ধরে ঔপনিবেশিক অপশাসনের কবলে পড়ে বিকাশরুদ্ধ দিশাহারা বাঙালি জাতিকে এই আশার আলোই দেখিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।