এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ মানে দেশব্যাপী স্কুল-মাদ্রাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ। আমাদের জীবনের বাস্তবতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের আনন্দ ও বেদনার অনুভূতি অনেকটাই ভোঁতা করে দিয়েছে কিন্তু এই যে, আনন্দোচ্ছল তরুণ শিক্ষার্থী যারা এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করল তারা যেন মজা করতে পারে, আনন্দ করতে পারে সেদিকে প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক ও সমাজের নিবিড়ভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তাদের আনন্দে বাধাদানের অধিকরা আমাদের নেই। আমরা তাদের এই নির্মল অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। আমরা সমাজে যে বিশৃঙ্খল ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখি সেটির দায়ভার যেন তাদের ওপর না পড়ে। ফল প্রকাশের দিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে শাসনের গাম্ভীর্যের বেড়াজাল ভেঙে একাকার হয়ে যান সবাই, উপভোগ করেন যৌথপ্রয়াসে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শিক্ষাকার্যক্রমের মূল্যায়ন। শিক্ষক ভুলে যান পাঁচ বছর পরে এই শিক্ষার্থীরা কে কোথায় থাকবে, তাদের ক’জনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, কিন্তু সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষকরা আনন্দে শামিল হন প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। দুই রাজনৈতিক দলের শক্তি পরীক্ষা আর টানটান উত্তেজনার মধ্যে প্রকাশিত হলো বহুল কাক্সিক্ষত এসএসসির ফল।
গত দুই বছর করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসসহ নানা ধরনের ছাড় দেওয়ায় পাসের হার বেশি ছিল। এবার সেই সুযোগ হয়নি। এবার সারা দেশের ২৯ হাজার ৭৯৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে এসএসসিতে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন, দাখিলে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৫ পরীক্ষার্থী ছিল। এবারও সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় এবং তাদের ১০০ নম্বরেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হয়ে মোখার কারণে পিছিয়ে পরীক্ষা শেষ হয় ৩০ মে। সেই হিসেবে ৬০ দিনের আগেই ফল প্রকাশ করা হলো। দ্রুত সময়ে ফল প্রকাশ করা একদিকে পজিটিভ কিন্তু অন্যদিকে মূল্যায়নের সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ৬০দিনের কম সময়ে ফল প্রকাশ করার মানে হচ্ছে শুধু মূল্যায়নের জন্য একমাসেরও কম সময় পেয়েছেন শিক্ষকরা। এত কম সময়ে বাসা, বিদ্যালয় ও সামাজিক সব কাজ করে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা এক দুরূহ কাজ।