শোকের মাস আগস্ট সামনে রেখে মনে পড়ছে কত কথা। যে মানুষটির জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সম্ভব হতো কি না বলা যাচ্ছে না, সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই থেকে আগস্ট আমাদের কাছে শোকের মাস, বেদনার মাস। তবে স্বস্তির বিষয় এটাই যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলা যাবে বলে মনে করেছিল এবং সে লক্ষ্যে নানা অপতৎপরতাও চালিয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে চেয়ে, বিতর্কিত করতে চেয়ে ওই কুচক্রীরাই ছোট হয়েছে, বিতর্কিত হয়েছে।
একই সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নামে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে তার প্রতি মানুষের মনে বিরক্তির ভাব তৈরি হয়। সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের একটি সাধারণ সভায় শিববাড়ি মোড়ের নাম বদলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রাখার এজেন্ডা ছিল। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, বহু বছর ধরে চালু থাকা একটি মোড়ের নির্দোষ নাম কেন বদলে ফেলতে হবে এবং কেনই বা বঙ্গবন্ধুর নাম সেখানে যুক্ত করতে হবে?
খুলনা নগরীতে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ বাস্তবে রয়েছেও বটে। সেটার নাম বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরের নামে করার প্রস্তাবও ছিল সভার নথিতে। কারা এমন জটিল চিন্তার আশ্রয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করলেন, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, শেখ আবু নাসেরের নামে একটা কিছুর নামকরণের জন্যই ওই দুটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। এর আওতায় শিববাড়ির নাম বদলে ফেলার বুদ্ধি বের করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর নাম সেখানে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে, যাতে প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না ওঠে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অবস্থানকালে অন্য সবার সঙ্গে শেখ আবু নাসেরও নির্মমভাবে নিহত হন। তার নামে কোনো সড়ক, মোড় বা স্থাপনার নামকরণ হলে তাতে কেউ আপত্তি করবে না। সেটা হওয়াও উচিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চত্বরের নাম পাল্টে সেখানে তার নাম বসাতে হবে কেন? শিববাড়ির নামই বা বদলে ফেলতে হবে কেন?