বলা হয় ‘শিক্ষক’ সমাজের সবচেয়ে সম্মানি ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যা অর্থসম্পদের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত নয়। এই শিক্ষকরাই সমাজের বৃহত্ একটি অংশের নেতৃত্ব দেন, যা চর্মচক্ষে দেখা যায় না। এখনো এই ভূখণ্ডের তৃণমূল পর্যায়ের শত সহস্র মানুষ মেয়ের বিয়ে বা সন্তানের মঙ্গল কামনায় মাস্টার মহাশয়দের পরামর্শক হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের দেওয়া উপদেশ, আদেশ-নির্দেশ সাদরে গ্রহণ করেন। হাজার প্রতিকূলতার দেশে শিক্ষকরা এখন সম্মানের শ্রেষ্ঠাংশে অবস্থান করছেন। এই সম্মানই আত্মতৃপ্তি। তিরস্কার, ধিক্কার, উপহাস মানব সমাজের নেতিবাচক কর্মফল। স্বাধীন দেশের শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মাইলফলক স্থাপন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭৩ সালে দেশের ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার বেসরকারি (রেজিস্টার্ড) প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তার এই উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে। এরপরও বর্তমানে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজপথে কেন? বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এই শিক্ষক সমাজের অন্তরের দীর্ঘদিনের জমাটবাঁধা কষ্টের ইতিহাস বেরিয়ে আসে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের এমপিওভুক্ত ৪ হাজার সাতটি কলেজ, ১৯ হাজার ৮৪৭টি মাধ্যমিক স্কুল, ৯ হাজার ৩৪১টি মাদ্রাসা এবং ৫ হাজার ৮৯৭টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৫ লাখ, ৬ হাজার ৬৩৭ জন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। যারা এমপিওভুক্ত হিসেবে (মান্থলি পেমেন্ট ভিত্তিতে) মাস শেষে সম্মানি পান। এ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা এই সরকারই নিশ্চিত করেছে, এটা স্পষ্ট। তবে বৈষম্যের ফিরিস্তি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ, সেখানে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বাড়িভাড়া পান মাত্র ১ হাজার টাকা। উত্সব ভাতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পান শতভাগ, এমপিওভুক্ত শিক্ষক পেয়ে থাকেন মাত্র ২৫ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক অবসরকালীন মাসিক ভাতা পান ৯০ শতাংশ, এমপিওভুক্ত শিক্ষরা সেখানে কিছুই পান না! অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক, কর্মচারীকে কোনো চাঁদা দিতে হয় না অথচ মূল বেতনের ১০ শতাংশ চাঁদা গুনতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের।