বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে চীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) নামের যে বহুপক্ষীয় ঋণদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে, গত মাসে হঠাৎ করে কানাডা সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, চীন সরকার প্রতিষ্ঠানটিতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের জুড়ে দিয়েছে এবং তারা ‘গোয়েন্দা পুলিশের মতো তৎপরতা চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর দিন কয়েক পরই হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিতর সিজার্তো ঘোষণা দেন, চীনা কোম্পানি হুয়াইউ কোবাল্ট তার প্রথম ইউরোপীয় কারখানা হাঙ্গেরির অ্যাকস নামের ছোট গ্রামে স্থাপন করবে; সেখানে তারা বিদ্যুৎ–চালিত যানের ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাথোড উৎপাদন করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান বৈরিতার পটভূমিতে এই দুটি শিরোনামকে অতি তুচ্ছ বলে উড়িয়ে দেওয়া যেতেই পারে। তবে কানাডা ও হাঙ্গেরির ঝোঁক এই বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
এটি ঠিক, ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় স্পষ্টতই গুরুত্বপূর্ণ। তবে একই সঙ্গে তুলনামূলক ছোট দেশগুলোর এই কৌশলগত বাজি ধরা বিশ্বায়নের ভবিষ্যতের জন্য সমান গুরুত্ব বহন করে। কানাডা ও হাঙ্গেরি ন্যাটোর কম জনসংখ্যার দেশ। দেশ দুটি কৌশলগত পরিবর্তনের সূচনা করে অপ্রত্যাশিতভাবে বাণিজ্যের নতুন নতুন জায়গা তৈরি করছে।
পাঁচ বছর আগে হাঙ্গেরি ছিল জাতীয়তাবাদের ‘পোস্টার চাইল্ড’ এবং কানাডা ছিল মুক্ত বাণিজ্য বিশ্বের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু এখন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচালক বালাজ ওরবান বর্তমানে অর্থনৈতিক যোগাযোগের কৌশল নিয়ে বাজি ধরছেন, যেখানে কানাডা বিপরীত দিকে যাচ্ছে।
সুরক্ষাবাদ, ডিকাপলিং (জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া) এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেশের ভেতরের চাহিদা দেশের উৎপাদন দিয়ে পূরণ করার বিষয়ে চীনের ধারণার মুখোমুখি হয়ে বালাজ দাবি করেছেন, ‘যদি শীতল যুদ্ধের ব্লকভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হয়, তাহলে সেটি হাঙ্গেরির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলবে।’