সাইবার অপরাধের শিকার হইয়াও ৮৩ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনি পদক্ষেপ লইতে চাহেন না বলিয়া যেই পরিসংখ্যান সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে উদ্ধৃত হইয়াছে, উহার তাৎপর্য দ্বিবিধ। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-পিসিএসডব্লিউ যেইভাবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও সাক্ষ্য প্রদানে ভুক্তভোগীর আগ্রহের অভাবকে ইহার কারণ হিসাবে দেখাইয়াছে, বিষয়টি ঐ রূপ সরলরৈখিকও নহে। প্রথম কারণ আইনি পদক্ষেপে সম্মতি দিবার পর প্রতিকার পাইতেও যদি দীর্ঘদিন অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তায় থাকিতে হয়, তাহা হইলে ভোগান্তি বাড়ে বৈ কমে না।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনেই দেখা যাইতেছে, ৮০ শতাংশ অভিযোগকারী প্রাপ্ত ‘প্রতিকার’ লইয়া অসন্তুষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন। দ্বিতীয়ত, আমাদের সমাজে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করিবার প্রবণতা প্রবল। সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তি যদি আইনি প্রক্রিয়ায় আগ্রহী হইয়াও থাকেন, খোদ আইনি ব্যবস্থা কি তাঁহার পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি গোপন রাখিবার নিশ্চয়তা দিতে পারিবে? বিশেষত যথায় ভুক্তভোগীর অধিকাংশই নারী ও শিশু, তাহাদের সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা মনে করি, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংস্থা বা বিভাগগুলির দক্ষতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধির উদ্যোগই বরং জোরালো করিতে হইবে। যদি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রতিকার পাওয়া যায় এবং এই ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা পায়, তাহা হইলে আইনি পদক্ষেপে আগ্রহ বাড়িতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীকে মুখোমুখি বসাইয়া ‘মীমাংসা’ করিবার যেই ব্যবস্থা বিদ্যমান, উহা লইয়াও পুনরায় চিন্তা প্রয়োজন। যত স্বল্পমাত্রার সাইবার অপরাধই হউক না কেন, অভিযোগ প্রমাণিত হইলে অভিযুক্তকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নজরদারিতে রাখা যাইতে পারে। দাপ্তরিক ও সামাজিক কর্মে ব্যবহৃত তাঁহার ব্যক্তিগত বিবরণীতেও উহার উল্লেখ থাকিতে পারে। ফলে একই প্রকার অপরাধের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা কমিয়া যাইবে। পাশাপাশি এইরূপ ব্যবস্থাও গড়িয়া তুলিতে হইবে, যথায় সাইবার অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা লইবার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সম্মতি অনিবার্য নহে। প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হইলে পুলিশই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপসমূহ লইতে পারে।