ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে অভিনয়ের পথচলা শুরু হয়েছিল উত্তমকুমারের। পরবর্তী সময়ে যিনি হয়ে উঠবেন বাংলা সিনেমার একচ্ছত্র মহানায়ক, দেশভাগের যন্ত্রণা, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অভাবে ধুঁকতে থাকা মধ্যবিত্ত বাঙালিকে যিনি দেখাবেন আশার আলো; তাঁকে তো ব্যর্থতার আগুনে পুড়ে খাঁটি হতেই হবে। মহাকাল তাই তাঁকে তৈরি করেছে সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার উপযুক্ত করে।
‘ফ্লপমাস্টার জেনারেল’ থেকে তত দিনে উত্তমকুমার প্রকৃত অর্থেই বাঙালির মহানায়ক হয়ে উঠেছেন। শুধু সিনেমায় নয়, পর্দার বাইরেও নিজের ইস্পাতকঠিন ব্যক্তিত্ব দিয়ে, ভুবনভোলানো হাসি আর আন্তরিকতা দিয়ে জয় করেছেন মানুষের মন। ১৯৫২ সালে ‘বসু পরিবার’ দিয়ে যে সাফল্যের শুরু, সেটা টিকে ছিল পরবর্তী দুই দশকের বেশি সময়। তবে ১৯৭৬ সাল থেকে আবার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে উল্টো দিকে। উত্তমের বেশির ভাগ সিনেমাই বক্স অফিসে পরপর ব্যর্থ হতে থাকে।
অনেকে বলেন, ওই সময়টায় অনেক নিম্নমানের চিত্রনাট্যে কাজ করছিলেন তিনি। নিজের আত্মজীবনী ‘আমার আমি’তে উত্তম সে কথা স্বীকারও করেছেন। লিখেছেন, ‘ব্যস্ততার মধ্যে থাকি বলে ভালো থাকি। কাজ করতেই হবে, তাই অনেক সময় মনের দিক থেকে সায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে কাজ করতে হয়। টাকারও ব্যাপার আছে। যেখানে আছি, যে পরিবেশ তৈরি করেছি—সে খরচ আমাকে বহন করতেই হবে, তা না হলে স্ট্যাটাস মেইনটেইন হবে না। তা ছাড়া, অনেকেই অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আসে। আর্থিক সাহায্য চায়। অনেক টাকা প্রয়োজন, তাই বেছে বেছে কাজ করার উপায় নেই।’ ক্যারিয়ারের এ প্রতিকূল পরিস্থিতি ছাড়া ব্যক্তিগত কষ্টও ছিল। সব মিলিয়ে জীবনের শেষ দিকে এসে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন উত্তমকুমার।