সময় খুব দ্রুত বয়ে চলেছে। গত কয়েক দশকে আমরা পাড়ি দিয়েছি কয়েক শত-সহস্র বছর। পৌঁছে গেছি চাঁদে, মঙ্গলে ও সূর্যে। ঘুরে বেড়িয়েছি ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে। আবিষ্কার করেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে নতুন গতি এনে দিয়েছে। তাই তো বিতর্কে না জড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলা যায়, বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে করেছে সহজ, সুন্দর ও আনন্দময়।
আজকের বিজ্ঞানের জয়ধ্বনি, বিজ্ঞানের গতিময়তা আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন এক সময়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। নতুন গতি ও আবিষ্কারে প্রাণ জোগাচ্ছে।
বিজ্ঞান মানেই নতুনত্ব। নতুনত্ব সবসময় মেনে নেওয়া কঠিন। নতুনত্বে সবসময় এক গভীর শঙ্কা থাকে, ভয় থাকে, অনিশ্চয়তা থাকে। নতুনত্বকে মেনে নিতে পারা আনন্দের, তবে নতুনত্বে ভয়-শঙ্কাও স্বাভাবিক, খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। আমরা এখন বাস করছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে। আমরা এখন বাস করছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে। এই নতুন সূচনালগ্নে প্রশ্ন জাগতেই পারে, নব এই শিল্পবিপ্লব, নব এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ কতটা মানবিক? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র কোনও সময় মানুষের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে না তো? মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে না তো? কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়ে মানুষকে বেকার বানিয়ে দেবে না তো?
সম্প্রতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের মতামতের ওপর এক গবেষণা চালানো হয়। জরিপের ফলাফল বলছে, ৪৮ শতাংশ গবেষক মনে করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খুব খারাপ প্রভাব ১০ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ২৫ শতাংশ গবেষক মনে করেন, মানব অস্তিত্বের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকির হার শূন্য। অবশিষ্ট গবেষকবৃন্দ মনে করেন, এই ঝুঁকির পরিমাণ ৫ শতাংশ। গবেষকবৃন্দের মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত এই গবেষণার ফলাফল বলছে, মানবসমাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, অনেকাংশেই ঝুঁকিযুক্ত।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে কী প্রভাব ফেলবে আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র? মূলত আগামী দিনগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র নিবিড়ভাবে যুক্তি প্রয়োগ করতে পারবে, নানাবিধ জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারবে, নিখুঁতভাবে মানুষের ভাষা উপলব্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করবে; এবং একই সঙ্গে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রয়োজনে কোনও বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে এই যন্ত্র। আমাদের চিকিৎসাসেবা, অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, সংবাদ সংস্থা বা গণমাধ্যম, ভাষান্তর প্রক্রিয়া, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বিপণি-বিতানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ব্যাপকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। উন্নত হবে আমাদের স্বয়ংক্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা, নিশ্চিত হবে বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কার্য ব্যবস্থাপনা ও টেকসই হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কর্মসূচি।