আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে। এসব এলাকায় বাস করছেন অথবা ভ্রমণ করেছেন– এমন কারও যদি জ্বরের সঙ্গে বিশেষ কয়েকটি লক্ষণ থাকে তাহলে তাকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা ও চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
লক্ষণগুলো হচ্ছে– বমিভাব বা বমি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, শরীরে ব্যথা, শরীর পরীক্ষায় টর্নিকুয়েট টেস্ট পজিটিভ পাওয়া (চিকিৎসক করবেন), শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়া এবং যে কোনো ‘সতর্কতামূলক চিহ্ন’। এর মধ্যে দুই বা ততোধিক লক্ষণ থাকতে হবে। সতর্কতামূলক চিহ্নগুলো হচ্ছে– একটানা বমি, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, অবসন্নতা, অসংলগ্নতা বা অস্থিরতা কিংবা আচরণগত পরিবর্তন, শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ (চামড়ায় ফুসকুড়ি, দাঁতের মাড়ি, নাকে, বমির সঙ্গে পায়খানা-প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সঙ্গে অস্বাভাবিক মাত্রায় রক্ত যাওয়া), হাত-পা ফ্যাকাশে হয়ে ঠান্ডা বা ঘর্মাক্ত হওয়া, ৪-৬ ঘণ্টা ধরে প্রস্রাব না হওয়া অথবা জ্বরমুক্ত অবস্থায় গিয়ে উন্নতি না হওয়া বা অবনতি হওয়া। পাশাপাশি যকৃৎ বড় হলে আর রক্ত পরীক্ষায় হিমাটোক্রিট বাড়াও সতর্কতার চিহ্ন।যেহেতু ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, রোগীদের মধ্যে প্রথমে যে প্রশ্ন আসে সেটা হলো, জ্বরটা কি আসলেই ডেঙ্গু না অন্য কোনো সাধারণ জ্বর? লেখার শুরুতেই বলে দিয়েছি বর্তমান পরিস্থিতিতে আক্রান্ত এলাকার অধিবাসীদের যতক্ষণ অন্য রোগের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া না যায়, ডেঙ্গু মাথায় রাখতে হবে এবং ওপরের লক্ষণগুলো মেলাতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেই জ্বর আসবে এমন নয়। বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ভাইরাস আক্রান্ত হলেও লক্ষণহীন কিংবা অন্য সাধারণ জ্বরের সঙ্গে আলাদা করা যায় না– এমন নগণ্য অসুস্থতায় ভোগেন। যাদের ডেঙ্গু জ্বর হয়, তাদের কারও রক্তপাত জাতীয় লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে যাদের রক্তপাতের লক্ষণ দেখা যাবে (ওপরে বলা হয়েছে) তাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
এদের চেয়ে গুরুতর রোগী হচ্ছে, যাদের রক্তনালি থেকে প্লাজমা বের হয়ে ‘শক’ হয় বা না হয়। শকের রোগীর নাড়ি দ্রুত দুর্বল হবে, রক্তচাপের দুটি মান (সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিকের পার্থক্য) কাছাকাছি চলে আসবে (২০ এরও কম হতে পারে), হাত-পা ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে হবে। রোগী অস্থির বা অবচেতন হবে। অনেকের নাড়ি ও রক্তচাপ নাও পাওয়া যেতে পারে। এসব লক্ষণ ছাড়াও চোখের পেছনে ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এক কথায়, চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা এবং রক্ত পরীক্ষা ছাড়া ডেঙ্গুকে সরিয়ে চিন্তা করা অসম্ভব। মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু জ্বরে নাক দিয়ে পানি পরা ও হাঁচি-কাশি হবে। কাশি (সাধারণত শুষ্ক), মাথাব্যথা, পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা, গুরুতর অস্বস্তি (অস্বস্থিবোধ), গলা ব্যাথা হতে পরে। ফ্লু সংক্রমণের ২ থেকে ৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। তবে অন্য কোনো কারণে জ্বরের কিছু লক্ষণ থাকলে চিকিৎসককে জানান।