বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন সুন্দরবন। শ্যামনগর দেশের বৃহত্তম উপজেলা। এই উপজেলার মানুষ একই সঙ্গে বিরল ও নিদারুণ অভিজ্ঞতার সঙ্গী। প্রতিদিন সুন্দরবনকে দেখে বড় হওয়ার অভিজ্ঞতাটি বিরল। তবে অন্য অভিজ্ঞতাটি নিদারুণ। তীব্র নোনা আর লাগাতার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আজ ঝাঁঝরা এই জনপদ। বিস্ময় লাগে এখানেই, ধূমঘাটে, এক সময় গড়ে ওঠেছিল রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। মিডিয়া আজ এখানকার গাবুরাকে চেনে জলবায়ু-দুর্গত এলাকা হিসেবে। কত মিডিয়া, কত উন্নয়ন ফেরিওয়ালা নিত্য এখানে আসে ‘দুর্গতি’ বুঝতে। এখান থেকেই জাপানি বড়লোকদের খাবার থালায় নরম খোলের কাঁকড়া যায়। ঢাকায় যায় সুন্দরবনের মধু। তো গাবুরার কথা যখন চলেই এলো, দেখা যাক আইলার ১৪ বছর পর কী স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে এখানে বাঁচে মানুষ। এই যে দুম করে ‘আইলার’ নাম লেখা হলো, দেশের কতজনের জানা আছে এই নির্দয় যন্ত্রণার নাম? দেশজুড়ে মুছে গেলেও গাবুরার যেকোনো জীবনে আইলা এখনো এক দুঃসহ স্মৃতি। এর দাগ ও ক্ষত নিয়ে এখনো বেঁচে আছে গাবুরা। আইলা ২০০৯ সালের এক ঘূর্ণিঝড়, যা, লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় শ্যামনগরসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল। তো এই অতি পরিচিত গাবুরাতে কিন্তু যাতায়াত এত সহজ কোনো ব্যাপার নয়। ঢাকা থেকে প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর। তারপর সড়কপথে আরও ৩০ কিলোমিটার লক্কড়ঝক্কড় যাত্রার পর নীলডুমুর ঘাট। নৌকায় খোলপেটুয়া নদী পাড় হয়ে ডুমুরিয়া ঘাট। তারপর হেঁটে যে পথে যাই, যার সঙ্গেই কথা হয় ১৪ বছর আগের আইলার দগদগে ক্ষত টের পাওয়া যায়।