মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত। হঠাৎ মন্ত্রী এ কী কথা বলিয়া গেল! কৃষ্ণনগরে নির্বাচন করিতে হইবে, অন্যথায় মহারাজকে রাজ্যচ্যুত করা হইবে, এটাই তো মন্ত্রীর কথা। গোপাল ভাঁড় অবশ্য এতদিন বেশ সামলাইয়াই আসিতেছিল, কিন্তু সেইবা আর কতটুকু করিতে পারিবে! একদিকে মুর্শিদাবাদের নবাবের গ্রাস করার বাসনা, অন্যদিকে মন্ত্রীর অন্তহীন লালসা আর এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় দিল্লির বাদশাহের অসম্ভব ফরমান, তাহা হইলে গোপাল আর কীভাবে সামলায়?
মহারাজ প্রাসাদের শয়নকক্ষে অস্থিরভাবে পায়চারি করিতেছেন। আর যতই ভাবিতেছেন, ততই অস্থিরতা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়াই চলিয়াছে। মহারানিও বিচলিত কিন্তু তিনি উহা প্রকাশ করিতেছেন না, শুধু মহারাজকে সান্ত্বনা দিয়া চলিয়াছেন।
মহারানি—আপনি শান্ত হন মহারাজ। গোপাল যতক্ষণ বেঁচে আছে ততক্ষণ অন্তত তার ওপর ভরসা রাখুন। সে একটা কিছু নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করবে।
—কিন্তু রানি তুমি বুঝতে পারছ না তো ব্যাপারটা কত বিরাট! একদিকে মুর্শিদাবাদের নবাব আর দিল্লির বাদশাহের আদেশ, তার ওপর আছে ফিরিঙ্গিদের ব্যবসায়িক লোভ। আর সবকিছুতেই তাল দিচ্ছে মন্ত্রী, ভেতরে ভেতরে সে চেষ্টা করছে যাতে আমাকে শেষ করে দিয়ে কৃষ্ণনগরের সিংহাসনে বসতে পারে। বলো তো, গোপালের পক্ষে কি সম্ভব এদের সব চক্রান্ত ভণ্ডুল করা?
—মহারাজ, আপনি গোপালের বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখুন। সে পেশায় নরসুন্দর, সব পেশার চাইতে এরা অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়।
—কিন্তু এখন আমি কী করব বলো তো রানি?