স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি রোল মডেলে পরিণত হয়। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ যেন সামগ্রিক উন্নয়ন, অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, সামাজিক সমতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু তখন বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহজে গ্রহণ করেনি। এটা আমাদের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা যে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুটি পরাশক্তির নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত ছিল এবং পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সোভিয়েত ব্লকের আরেকটি দেশ এবং যেটি পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং জোটনিরপেক্ষ জোটে একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।