মানুষ বড়, নাকি মনুষ্যত্ব? মানুষই তো বড়, মনুষ্যত্বের চেয়ে। কিন্তু যদি মানুষের মনুষ্যত্ব না থাকে তবে তো সে আর মানুষই থাকে না। আমরা যে বলি, সে তো মিথ্যা বলি না যে, মনুষ্যত্বহীনতায় মানুষ পশু হয়ে পড়ে। মানুষ পশু হলে পশুর চেয়েও বড় পশু হয়—যেমন আতঙ্কের দিক থেকে, তেমনি নিষ্ঠুরতার দিক থেকে। মানুষের পশুত্ব অস্বাভাবিক পশুত্ব। হয়তো আতঙ্কগ্রস্ত, হয়তো নিষ্ঠুর, হয়তো দুই-ই।
মানুষের নিষ্ঠুরতার দিকটার কথা শিল্প-সাহিত্যে প্রচুর পরিমাণে বলা হয়েছে। মানুষ পশু হয়ে উঠেছে অর্থাৎ হিংস্র, নিষ্ঠুর, বিবেচনাহীন হয়ে পড়েছে—এমন চিত্র জীবনে যেমন পাওয়া যায়, শিল্প-সাহিত্যেও তেমনি পাই। কিন্তু মানুষ তো পশু হয় শুধু নিষ্ঠুরতার দিক দিয়েই নয়, হয় আতঙ্কের, পরাজয়ের, হতাশার দিক থেকেও। যে মানুষ সন্ত্রস্ত, পরাজিত, হতাশ সে মানুষ আর মানুষ নেই, অপরিহার্য মনুষ্যত্ব হারিয়ে সে পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে—নিজের অজ্ঞাতেই।
খাঁচার পাখি যেমন পাখি নয়, প্রকৃত প্রস্তাবে, সন্ত্রস্ত, পরাজিত; হতাশ মানুষও তেমনি মানুষ নয়, যথার্থ অর্থে। এই কথাও, সন্ত্রস্তের এই মনুষ্যত্ব হারানোর কথাও আমাদের শিল্প-সাহিত্যে আছে। কিন্তু যা নেই, খুব করে নেই, যত করে থাকা উচিত ছিল তত নেই, তা হচ্ছে কেমন করে মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে তার বিনষ্ট মনুষ্যত্ব—সেই পথের কথা। দুঃখ আছে, কথা নেই দুঃখ-মোচনের।