“বেশ্যাদেরও দেখি, গঙ্গা থেকে নেয়ে ফেরবার সময় শিবের মাথায় একটু জল না দিয়ে পারে না। কেন তখনও কি তার শিবের মত বর পাবার আশা নাকি?” নষ্ট রাজনীতি নিয়ে লেখা সমরেশ বসু’র ‘প্রজাপতি’ উপন্যাসে এই দুটি লাইনই নষ্ট রাজনীতিকদের জন্যে শুধু নয় নষ্ট রাজনীতি যে নষ্ট সমাজ তৈরি করে সেই সমাজের উপমা হিসেবে সব থেকে কঠিন এবং এক অনবদ্য উপমা। গোটা উপন্যাসের সারাংশ তিনি যেন এই দুই লাইনে তুলে এনেছেন।
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত সমরেশ বসু’র এই প্রজাপতি উপন্যাস মূলত পশ্চিম বঙ্গের নষ্ট রাজনীতি ও তার প্রভাবে সমাজ যেভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো তারাই এক ছবি। একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাওয়া এ উপন্যাসে নষ্ট রাজনীতিক থেকে নষ্ট প্রশাসন ও সমাজকে কিছুটা যৌনতার এক তীর্যক দৃষ্টিতে তুলে এনেছিলেন সমরেশ বসু।
রাষ্ট্র এই বই নিষিদ্ধ করেছিলো যৌনতার কথা বলে। রাষ্ট্র যারা চালান সেই আমলা ও রাজনীতিকরা অতটা বোকা নন। তারা যে উপন্যাসের মূল কথা বোঝেননি তা নয়। কিন্তু মূল কথা বলে তো আর বইটিকে নিষিদ্ধ করা যায় না। তাই যৌনতাকে তাদের কাজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আনন্দবাজারে অশোক সরকারের মতো সম্পাদক ছিলেন বলেই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে আবার বইটি প্রকাশের সুযোগ পায়– এ ইতিহাস সকলের জানা।
সমরেশ বসু’র এই উপন্যাস লেখার মাত্র পাঁচ বছর পরে মুক্তি পায় জহির রায়হানের কালজয়ী ছায়াছবি ‘ জীবন থেকে নেয়া’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ( অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় )।