ভোর না হতেই মেঘের দামামা। তুমুল বৃষ্টি। সূর্য ওঠার কালে অন্ধকার হয়ে আসে পৃথিবী। আর কী বিদ্যুৎ চমকানিতে চমকে যায় পিলে! আহা, প্রচণ্ড দাবদাহের সময় এমন বৃষ্টির জন্যই ছিল কত প্রতীক্ষা। বর্ষা তো আগেই শুরু হয়েছে, বৃষ্টিও। তবে আজকের বৃষ্টি অন্য রকম। কারণ, আজ ঈদের দিন। ঈদুল আজহা। আমরা যাকে কথায় কথায় ‘বড় ঈদ’ বলি। ফলে বজ্রপাতের গুড়ুম গুড়ুম শব্দকে মনে হলো যেন কামানের গোলা। ঈদের আগমনে একসময় রাজা-বাদশাহরা কামান দাগিয়ে উদ্যাপন করতেন। তেমনটিই যেন মনে হলো।
ঈদের দিন যেহেতু, বিছানায় শুয়ে থাকার সুযোগ নেই। ঈদের জামাতে তো যেতেই হবে। ছোটবেলায় ঈদের সকাল মানে মায়ের নানা ব্যস্ততা। হাঁক–ডাক দিয়ে আমাদের ডেকে তোলা। তারপর গোসল সেরে, পাঞ্জাবি পরে, আতর মেখে ঈদগাহের জন্য প্রস্তুত হওয়া। ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টান্ন মুখে দেওয়া নাকি রেওয়াজ, আমাদের প্রিয় নবীজি সেটা করতেন। আম্মা সেমাই বা খেজুর মুখে তুলে দিতেন আমাদের।
পরিবারের সেই ঈদ মিস করছি এবার। অফিসের কাজে ঢাকায়ই থাকতে হলো। মেস বাসায় আরও একজন এবার ছুটি পাননি। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা। ঈদের দিন পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী আরও কত মানুষ এভাবে ঈদ করেন! তাঁদের সেই বেদনাময় ঈদের স্পর্শ পেলাম আমিও।
ঘর থেকে, পরিবার থেকে দূরে থাকলেও, কিছুটা বিষাদময়তা কাজ করলেও, ঈদ বলে কথা—মনে আনন্দ ভর করবেই। কিন্তু বৃষ্টিতে বাধল বিপত্তি। চিলেকোঠার বাসায় বৃষ্টি দেখতেও দারুণ লাগছিল। মনে মনে আউড়ে যাচ্ছিলাম, ‘নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে/তিল ঠাঁই আর নাহি রে।/ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’।