বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের সহযোগী সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইআইইউর বাসযোগ্য শহরের র্যাংকিংয়ে ঢাকা হতাশাজনকভাবে পুনরায় প্রায় তলার দিকে স্থান পাইল। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, উক্ত সূচকে এই বৎসর ১৭৩টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬তম; অর্থাৎ নিম্নের দিক হইতে সপ্তম। অধিকতর লজ্জাজনক হইল, ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত কিয়েভও ঢাকার এক ধাপ উপরে স্থান পাইয়াছে।
গত বৎসর ইআইইউ সূচকে ঢাকার অবস্থান একই ছিল। তবে ঐ বৎসর জরিপে অংশগ্রহণকারী শহর ছিল ১৭২টি। সেই হিসাবে এই বৎসর বাসযোগ্যতার মানদণ্ডে ঢাকার অবনমন ঘটিয়াছে বলিলে ভুল হইবে না। সূচকে ঢাকা স্থায়িত্বে ৫০, স্বাস্থ্যসেবায় ৪১ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০ দশমিক ৫, শিক্ষায় ৭৫ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ৮ নম্বর পাইয়াছে। যে দেশটি অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় ছাড়িয়া উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখাইবে এবং আর মাত্র দুই দশকের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উঠিবার প্রত্যাশা করে, সেই দেশের রাজধানীর এমন হাল অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই; রাষ্ট্রের পরিচালকদের উন্নয়ন পরিকল্পনাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলিয়া দিয়াছে।
অনস্বীকার্য, প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪৮ সহস্র লোকের বসবাস যে শহরে, তথায় যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনাই কার্যকর দুরূহ। কিন্তু বিভিন্ন সরকারের ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসনিক ও উন্নয়ন পরিকল্পনার ফলস্বরূপ সকল কিছুর কেন্দ্রস্থল ঢাকা হওয়াই যে এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী– উহাও অস্বীকার করা যায় না। অপর্যাপ্ত গণপরিবহন এবং প্রায় অকার্যকর সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সীমিত সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির লাগামহীন বৃদ্ধি এই শহরে মানুষের সহজ ও সাবলীল চলাচলকে অসম্ভব করিয়া রাখিয়াছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবাসিক এলাকা মানে কংক্রিটের জঙ্গল; যথায় একটা আদর্শ শহরের জন্য জরুরি জলাধার, সবুজ, উন্মুক্ত স্থান ও শিশুদের খেলার মাঠ শুধু অপ্রতুল নহে, ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির দিকে।