গেলবারের মতো, এবার এখনো গরু কিনলে ছাগল ফ্রির বিজ্ঞাপনী আওয়াজ ওঠেনি। তবে, দেশে গরু-ছাগলের অবিরাম ‘বাম্পার ফলন’ নিয়ে কথা বলার বিশিষ্ট বহু গো-চিন্তক, গো-গবেষকের অস্তিত্ব মিলছে। যা ইচ্ছা বলছেন, মতামত দিচ্ছেন। জাবর কাটার মতো, গো-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মতামত রাখছেন। এক কথা বলছেন বারবার। এ সুযোগে নিজের ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টাও করেন। মূলধারার গণমাধ্যম ভেদ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের যথেচ্ছ কিলবিল। ছাগলে কিনা খায়, পাগলে কিনা বলে-এর মতো অবস্থা কারও কারও। ছাগলামি-পাগলামি শব্দগুলো অবশ্য মানুষকে লক্ষ্য করেই। ছাগলের কুকর্মের জন্য ছাগলকে ছাগলামি বলা হয় না। মানুষ ছাগলের মতো কাণ্ড করলে, ছাগলামি শব্দের অবতারণা হয়।
এক সময় গরুর জন্য ভারতের ওপর পুরোদস্তুর নির্ভর ছিল বাংলাদেশ। শুধু কোরবানি ঈদের আগে দেশে ২০ থেকে ২২ লাখ গরু-ছাগল বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসত। সারা বছর এই সংখ্যা ৩০ লাখে ছুঁয়ে যেত। ভারত থেকে গরু না এলে বা গরু না আনলে কোরবানি করা অসম্ভব ভাবা হতো। সারা বছরের গো-মাংসের স্বাভাবিক প্রয়োজনও মিটত না। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতীয় গরুর বাংলাদেশে প্রবেশ এন্ট্রি বন্ধ করে দেয়। ফলে চরম বাজে অবস্থা হয় বাংলাদেশে। চ্যালেঞ্জ হিসেবে বাজারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ গবাদিপশুর লালনপালন ব্যাপক হারে বাড়াতে সক্ষম হয়।
দেশে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ভেড়া পালন ও উৎপাদনও বেড়েছে। মানুষের চেষ্টায় গো-কমিউনিটির বংশবৃদ্ধি একটি মোটাদাগের ঘটনা হলেও সেভাবে আলোচিত নয়। অথচ এর মধ্যে বিশ্লেষণের অনেক উপাদান। গরু, ছাগল, মহিষ এমনকি লোমওয়ালা ভেড়ায়ও কীভাবে আমরা বাড়বাড়ন্তে এলাম? এটি কেবল আলোচনা নয়, শিক্ষণীয়ও। এই কমিউনিটিটি অসাম্প্রতিক-অরাজনৈতিক। এরা প্রায় সবাই ‘গ্রাসমেট’। কোনো ক্লাস কনফ্লিক্ট নেই। উঁচু-নিচু ভেদাভেদ নেই। কে হাম্বা আর কে ম্যাঅ্যাঅ্যা আওয়াজ দেয় তা ম্যাটার করে না। গরুত্ব বা ছাগলত্ব যার যার পারসোনাল ইস্যু।