উন্নত দেশ বলুন আর অনুন্নত দেশ-ই বলুন, পৃথিবীজুড়ে পারিবারিক সহিংসতা কম আর বেশি আগে থেকেই ছিল। অন্যান্য অসুখ-বিসুখের মতো এটিও একটি অসুখ যা এখনো আছে। অন্যান্য অসুখ-বিসুখের ওষুধ বের হলেও এই অসুখ নিরাময় করার ওষুধ এখনো দৃশ্যমান নয়! তাই ক্রমাগত এর পরিধি বেড়ে চলেছে। আগে তেমন খবর না পাওয়া গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এখন কিছুই আর লুকানো থাকছে না, সব জানার অবাধ সুযোগ এখন! নানারকম দুর্ঘটনার কথা তাই প্রায়ই জানতে পারছি। কিন্তু সহিংসতার নানান ধরন দেখে আঁতকে ওঠা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না। অনেকটাই অসহায় অবস্থা আমাদের। এদিকে অনেকেই আবার মনে করেন, মানে যারা নির্যাতন করে আনন্দ পান নির্যাতন করা তাদের এক প্রকার অধিকার। বাপ-দাদা, চৌদ্দপুরুষ ধরে এই অধিকার ন্যায়সঙ্গত, গ্রহণযোগ্য। এসবের কোনো রিপোর্ট করা বা বিচার চাওয়ারও অধিকার নেই মানুষের। বিশেষ করে পারিবারিক দ্বন্দ্ব মানে তাদের কাছে পারিবারিক ব্যাপার-স্যাপার! এসবের কোনো বিচার চাইতে নেই! সে কারণেই নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই বিশ্বব্যাপী পারিবারিক সহিংসতা সর্বাধিক অবহেলিত অপরাধগুলোর মধ্যে একটি। এ ক্ষেত্রে পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি সামাজিকভাবে লজ্জার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় বলে পারিবারিক সহিংসতার শিকারে পুরুষরাও অবহেলিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি দেশের লিঙ্গ সমতার স্তর এবং পারিবারিক সহিংসতার হারের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ এবং তাৎপর্যপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। স্বভাবতই লিঙ্গ সমতা কম থাকা দেশগুলোতে পারিবারিক সহিংসতার হার অনেক বেশি। তাই নারী নির্যাতনের কথাই শুনতে হয় বেশি।
এমন নয় যে, শুধু স্বামী-স্ত্রী-সন্তান নিয়েই সহিংসতা। শিশু, কিশোর, বাবা-মা বা বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সহিংসতাও পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হয়। সেটি শারীরিক, মৌখিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং যৌন নির্যাতনসহ নানরূপে হয়। বৈবাহিক ধর্ষণ, মারধর, অ্যাসিড নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নানারকম নির্যাতনে পঙ্গুত্বসহ মৃত্যুও হয়। কোনো কোনো দেশে পারিবারিক যোগসাজশে অনার কিলিং বা সম্মান রক্ষার্থে হত্যা আইনসঙ্গত হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। লিঙ্গ সমতা কম থাকা দেশগুলোতেই অনার কিলিংয়ের প্রচলন বেশি।