আমরা পৃথিবীর মানুষ এখন এক অস্থির সময় পার করছি। আমরা দেখছি রাজনীতির ডামাডোল, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং আরও নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা। ঘটে চলেছে জাতিগত ও আঞ্চলিক সংঘাতের অনেক ঘটনা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জটিল-কঠিন কূটনীতি পৃথিবীকে নতুন মেরুকরণের অনিবার্য লক্ষ্যে ধাবিত করেছে।
আমাদের মতো দেশে তো সব সময়ই কম-বেশি অস্থিরতা থাকে। তার ওপর বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির এই চক্কর এবং সর্বোপরি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত চাপান-উতোরে সেই অস্থিরতা আরও বহুগুণ বেড়েছে। আমরা এখন অতিশয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। তবে সেখানেও গলদ ষোলো আনা। কারণ গ্রহণযোগ্যতার মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য। আর অংশগ্রহণমূলক মানেও আমার অংশগ্রহণ; অর্থাৎ আমি অংশগ্রহণ করছি কি না।
পৃথিবীর এবং আমাদের দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে লেখালেখি, মতপ্রকাশের কোনো অন্ত নেই। মূল ধারার গণমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব রকম প্ল্যাটফর্মে তা অবিরাম চলেছে। এমন কোনো লোক নেই, যিনি তাঁর মত এবং সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন না। এটা ভালো। খুবই ভালো। এটাকেও বোধ হয় গণতন্ত্রের একটা সৌন্দর্য বলা যায়।
এই সামগ্রিক অবস্থার মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে তা হলো, প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ। সারা পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশে তো বটেই—এ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার দরকার মনে করছি এই কারণে যে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর পূর্তি) পালিত হলো এ বছর। প্রতিবছর দিবসটি পালনের জন্য ৫ জুন তারিখটি নির্ধারিত। ওই তারিখেই দিবসটি এ বছরও পালিত হয়েছে। তবে সব পর্যায়েই তা ছিল একেবারে নিষ্প্রভ।
আসলে পরিবেশ-প্রতিবেশের অবস্থা যতই সংকটাপন্ন হচ্ছে, বিষয়টির প্রতি উপেক্ষাও ততই বাড়ছে। এ কথা বলছি এই জন্য যে জাতিসংঘ এবং পৃথিবীর দেশে দেশে সরকারগুলোর নীতিনির্ধারণী উঁচুপর্যায়ে যে উদ্যোগ-আলোচনা দেখা যায় তা এখন পর্যন্ত পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ বা উন্নয়নে তেমন কোনো ফল দেয়নি। বৈশ্বিক মেরুকরণের নতুন ডামাডোলে অদূর ভবিষ্যতে কোনো ফল দেবে—এমন আশা করারও কোনো কারণ দেখছি না।