বাবার কাঁধে চড়ে পৃথিবী দেখার দিনগুলোই সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকে আমাদের। তার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া, একটু একটু করে চিনতে শেখা চারপাশ। আমাদের অবিরত ছোটাছুটি সামলাতে গিয়েও ক্লান্ত হতেন না তিনি। কিন্তু একটা সময় বাবাদেরও ক্লান্তি আসে। তারাও বিশ্রাম চান, চান আমাদের যত্ন আর ভালোবাসা। ছেলেবেলায় যা পেয়েছি, তার সবটা কখনোই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবু আমাদের চেষ্টাটুকু থাকুক। বাবার জন্য আমাদের উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা থাকুক। তাকে ভালো রাখার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ পরিশ্রমটুকু থাকুক।
বাড়লে বয়স...
বয়স বাড়লে নানা অসুখ এসে শরীরে জমা হতে শুরু করে। বয়সের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে দেখা যায় হাড়ের সমস্যায়। খেয়াল করে দেখুন, আপনার বাবা আগে আপনার সঙ্গে যেভাবে ছোটাছুটি করতেন, এখন কিন্তু আর তেমনটা পারেন না। বরং তিনি এখন সময় নিয়ে হাঁটেন। অনেক সময় হয়তো আপনাকেই তার হাতটা ধরতে হয়। আগে যেখানে বাবার হাত ধরে আপনি মসজিদে যেতেন, এখন সেখানে আপনার হাত ধরে বাবা মসজিদে যান। আগে যেমন বিকেলে আপনি বাইরে যেতেন বাবার সঙ্গে, এখন হয়তো বাবা অপেক্ষা করেন কখন আপনি তাকে বাইরে নিয়ে যাবেন। সময় এভাবে চিত্র উল্টে দেয়। আর দেয় কিছু দায়িত্ব। আমরা আমাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছি, সেখানেই আমাদের আসল পরিচয় লুকিয়ে।
বাবাকে ভালো রাখতে
বয়স বাড়লে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। তখন বাবা হয়ে যায় আমাদের সন্তান, আর আমরা হয়ে যাই তাদের অভিভাবক। তাই ছেলেবেলায় যেমন তারা আমাদের ভালো রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন, আমাদের তেমনটাই করতে হবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই যে হাড়ের সমস্যা, এর কষ্ট কেবল ভুক্তভোগীই জানেন। কিন্তু এটি আগেভাগে টের পাওয়া যায় না অনেক সময়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যে কারণে প্রথম অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ টের পাওয়া যায় না। কিন্তু হাড়ের ভেতরের উপাদান কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন তারা আর তখন এক নাগাড়ে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারেন না, শরীরে সারাক্ষণ ব্যথা বোধ করেন, শরীরে ভারসাম্য থাকে না, এমন আরও অনেক সমস্যা। বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি। এর বড় কারণ হলো তারা শরীরে আগের মতো ভারসাম্য রাখতে পারেন না। এর সবটাই ঘটে হাড়ে সমস্যা হওয়ার কারণে।
খেয়াল রাখুন খাবারে
বাবার চিকিৎসার পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে হবে না যদি আগেভাগেই তার যত্নের প্রতি মনোযোগী হন। বিশেষ করে তার খাবারের তালিকার দিকে নজর রাখতে হবে। তার বয়সের জন্য প্রয়োজনীয় সব খাবার রাখতে হবে তালিকায়। এতে তার জন্য দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা সহজ হবে। হাড় ভালো রাখার জন্য ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। খাবারের পাশাপাশি খেতে দিতে পারেন হাড়ের সুস্থতার সহায়ক কারকিউমিন সমৃদ্ধ ফাংশনাল ফুড। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ই বা ভিটামিন সি-র তুলনায় পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কারকিউমিন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আর্থ্রাইটিস, অ্যাজমা, হার্টের রোগ, অ্যালঝাইমার, ডায়াবেটিস এমনকী ক্যান্সার প্রতিরোধেও কারকিউমিনের উপকারী গুণ কাজে আসে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। বাজারে এখন কারকিউমিন সমৃদ্ধ কিছু ফাংশনাল ফুড পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের ফুড মূলত স্বাস্থ্যকর উপায়ে আমাদের সুস্থতার জন্য কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ খাওয়ালে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু এ ধরনের সমস্যা ফাংশনাল ফুডে নেই। তাই বাবার সুস্থতার জন্য তার খাবারের তালিকায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ফাংশনাল ফুড যোগ করতে পারেন। তবে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠানের ফাংশনাল ফুড কিনবেন।