একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। অন্যদিকে উচ্চ সুদহার, বিনিয়োগ হ্রাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। সব মিলিয়ে ২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালটিও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ভালো যাবে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, পরিস্থিতির আরো অবনতি না হলে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশে। তবে মূল্যস্ফীতির হার ধারণার চেয়ে বেশি হলে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় থাকলে অথবা বিভিন্ন অঞ্চলে ভূরাজনীতির উত্তেজনা আরো বাড়লে গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিই মন্দার দিকে ধাবিত হবে বলে আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের।
সংস্থাটির এ আশঙ্কা এরই মধ্যে বাস্তব রূপ নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির মাত্রা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। আঞ্চলিক পর্যায়ের ভূরাজনীতিতেও দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন উত্তেজনা। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা, ৮০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম একই দশকের মধ্যে দুই দফায় মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। যদিও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত প্রায় প্রতিটি সূচকেই এখন দেখা যাচ্ছে নিম্নমুখী প্রবণতা। মূল্যস্ফীতির হার গত মাসেও ছিল দুই অংকের কাছাকাছি। জিডিপির প্রায় ৯০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ব্যক্তি খাতের ভোগ ও বিনিয়োগ। দুটোই জিডিপির প্রক্ষেপিত হারের অনেক নিচে। রফতানি কিছুটা বাড়লেও আমদানিতে নিয়ন্ত্রণের কারণে সার্বিক বৈদেশিক বাণিজ্যও এবার কমতির দিকে। বাজেট বাস্তবায়নের হার লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম। জ্বালানি সংকট, কাঁচামালের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং উৎপাদন সক্ষমতা কমায় বৃহৎ শিল্প খাতেও শ্লথ হয়ে এসেছে প্রবৃদ্ধি। কৃষি খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ১৫ শতাংশেরও কম। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে বড় ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে।