১. নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদী মায়ের মতো। বহু বিস্তৃত নদী, উপ-নদী, শাখা নদী আঁচল বিছিয়ে বিপুল জলরাশিতে সুজলা, শস্য-শ্যামল বাংলাদেশ। নদী মরে যাচ্ছে। তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ’৭০ সালের নির্বাচনে জাতির পিতা ‘ক্রগ মিশন’ বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। ‘নদী বাঁচাও’ তাঁর প্রতিশ্রুতি আমরা ভুলেই গেছি। বর্তমান যুগে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ‘নদী-উন্নয়ন’ নয়; ব্রিজ-সেতু নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েছে দেশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাজেটে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোটি মানুষের অব্যক্ত দাহ ও যন্ত্রণার কথা তুলে ধরা প্রয়োজন।
২. প্রথমেই যমুনা ও পদ্মা নদীর বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাক। যমুনার তীর ধরে উৎসমুখে দেখা যায়, নদীটি এসেছে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে, ব্রহ্মপুত্র যার নাম। তিব্বতের ভিতর ১৭০০ কিমি., ভারতের ৯০০ কিমি. এবং বাংলাদেশে ৩০০ কিমি. বিপুল জলরাশি নিয়ে শেষ পর্যন্ত এসে ঠেকেছে পাবনার বেড়া উপজেলার শেষ প্রান্তে, গোয়ালন্দের কাছে। উৎস থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত বিস্তৃত নদীটির দৈর্ঘ্য হলো ২৯০০ কিমি.। ১৭৮৭ সনে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে আদি ব্রহ্মপুত্র যা মেঘনায় গিয়ে পড়েছিল তার মুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আদি ব্রহ্মপুত্র আজ মৃত প্রায়। ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবেশ করলে এই মূলধারার নাম হয় যমুনা। তথ্যে উল্লেখ আছে যে, এর অববাহিকা হলো ৫ লাখ ৮৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর অন্যতম প্রধান পানিপ্রবাহ এসেছে তিস্তা থেকে। তিস্তা নদী নেপাল-ভারত হয়ে বাংলাদেশের ডিমলায় প্রবেশ করে। করতোয়া ভারতের জলপাইগুড়ি অতিক্রম করে বাঙ্গালি নদীতে এসে যমুনার ধারাকে পুষ্ট করে, যার জলস্রোত ২১ হাজার কিউসেক। নদীটি বহু খালবিল, উপ-নদীর পানি ধারণ করেছে এবং আদি পাবনা জেলার বড়াল নদী যা বেড়া শাহজাদপুর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত। বর্ষায় যমুনায় লাখ কিউসেক জলস্রোত গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়।