বন্ধু, ঘনিষ্ঠ ও পরিচিতজন যাঁরা একসময় জাসদ ছাত্রলীগ করতেন এবং পরে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন বা তার কমবেশি সমর্থক ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে—আমি নই শুধু, আমরা অনেকেই একটা ধারণা পেয়ে এসেছি যে প্রকাশ্য নেতৃত্বে না থাকলেও সিরাজুল আলম খানই হলেন জাসদের রাজনীতির মূল লোক। নেপথ্যে থেকে তিনিই আসলে দলীয় নীতি ও কৌশল নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। ১৯৮০–এর দশকে জাসদের ভাঙন, বাসদের জন্ম ইত্যাদির পরও কোনো অংশেরই নেতা, কর্মী বা সমর্থক কাউকে তাঁদের অতীত রাজনীতির প্রশ্নে সিরাজুল আলম খানের এই লিগ্যাসি অস্বীকার করতে বা এ নিয়ে প্রশ্ন বা সমালোচনামুখর হতে তেমন দেখিনি।
বরং ১৯৭০–এর দশকে তাঁদের কারও কারও কথাবার্তা শুনে মনে হতো, চীনে যেমন মাও সে–তুং কিংবা কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রো, তেমনি বাংলাদেশেও মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিকাশমান তত্ত্বের তাত্ত্বিক হলেন সিরাজুল আলম খান। শিবদাস ঘোষের (সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া বা এসইউসি) নাম তখনো তাঁদের মুখে সেভাবে উচ্চারিত হতে শুনিনি বা দলীয় কোনো লিটারেচারে (রাজনৈতিক সাহিত্য) উল্লেখিত হতে দেখেছি বলেও মনে করতে পারি না। বরং অত্যুৎসাহী কেউ কেউ (তাঁদের মধ্যে আমাদের এক জাসদ সমর্থক কবি বন্ধুও ছিলেন) এমন কথাও বলতেন যে ‘দাদা’র রচনাসম্ভার যবে প্রকাশিত হবে, দেখে আমাদের বিস্ময়ের সীমা থাকবে না।