হাওরের মরমি কবি উকিল মুন্সী গেয়েছিলেন, ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে,/ পুবালি বাতাসে-/ নাওয়ের বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি/ আমারনি কেউ আসে রে…’।
দেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের একভাগজুড়ে বিস্তৃত জলাভূমির হাওরাঞ্চলে এই ‘ভাসা পানি’ আসতে শুরু করে বৈশাখের শুরু থেকেই। কিন্তু এবার বৈশাখ গিয়ে জৈষ্ঠ্যও শেষ হয়েছে। আষাঢ়ের শুরুতেও কাঙ্ক্ষিত পানির দেখা মিলছে না হাওরে।
টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এই সময়ে হাওর টইটম্বুর হয়ে যেখানে ‘সায়রে’ রূপ নেওয়ার কথা; সেখানে এখন মরা ঘাসের প্রান্তর। অথচ গত বছরই এই সময়েই সিলেট-সুনামগঞ্জ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল।
আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও পানি গবেষকরা বলছেন, ‘পুবালি বাতাস’ থাকলেও এবার নানা কারণেই সুরমা অববাহিকায় বর্ষা কিছুটা দেরিতে হচ্ছে। তবে, মধ্য জুনের পর হয়ত পানি বাড়তে পারে।
হাওরের মানুষের জীবন-জীবিকা মূলত মাছ এবং একমাত্র ফসল বোরো ধানকেন্দ্রিক। সময়মত পানির উঠা-নামার সঙ্গে এ দুটি অর্থকরী পণ্য ওতপ্রতোভাবে জড়িত।
পানি আগে এলে যেমন বোরো ফসল তলিয়ে সারাবছরের জন্য কৃষকের ঘরে আহাজারির দাগ রেখে যায়; তেমনি দেরিতে এলেও মিঠাপানির মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে না কিংবা ডিম ছাড়লেও তাজা পানির অভাবে তা নষ্ট হয়ে যায়।
গোটা হাওরের জীব-বৈচিত্র্য নির্ভর করে যে বর্ষার পানির উপর, সেই পানিরই দেখা না মেলায় উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে হাওরের ‘ইকো-সিস্টেম’, অভিমত গবেষক ও পরিবেশবাদীদের।