স্কুলজীবনে বাংলা ব্যাকরণের কারক ও বিভক্তি পড়ানোর সময় আমাদের আবুল হোসেন স্যারের দরাজ কণ্ঠে প্রথমবার শুনেছিলাম একটি কবিতার লাইন- “আমি কি ডড়াই সখী ভিখারি রাঘবে? পরবর্তীতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ’ শীর্ষক কবিতায় এ বাক্যটি আবার পড়েছি। নিজ আগ্রহে জেনেছি প্রাচীন ভারতের রাজা দশরথের পুত্রদের কাহিনি নিয়ে মহাকবি বাল্মিকী রচিত ‘রামায়ণ’ নামক সংস্কৃত মহাকাব্যে উল্লিখিত উক্তির নেপথ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বর্ণানুসারে লঙ্কা নামক দ্বীপরাজ্যে শত্রুর আক্রমণ ঘটলে রাবণ তার প্রিয় ও তেজস্বী পুত্র মেঘনাদকে কেন্দ্র করে সব যুদ্ধ পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। কিন্তু নানা ঘটনা ও অঘটনের মধ্য দিয়ে মেঘনাদকে নিরস্ত্র অবস্থায় শিরশ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করে রামের ছোট ভাই লক্ষণ। রাজপ্রাসাদের প্রার্থনা কক্ষে ঘটে যাওয়া এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর মুহূর্তেই অন্দরমহলে পৌঁছে যায়। এতে শোকে কাতর মেঘনাদের স্ত্রী প্রমীলা বিলাপ শুরু করে ও ঘটনাস্থলে যেতে চায়। কিন্তু তার সখী বাসন্তী ঘটনাস্থলের বিপজ্জনক পরিস্থিতি, বিশেষত রাঘব তথা রঘুবংশের শত্রুদের কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থলে যেতে বারণ করে। এতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে সতী সাবিত্রী স্ত্রী প্রমীলা। তার সাফ জবাব, আমি একাধারে দানবের কন্যা, কুলো বধূ, রাবণের পুত্রবধূ ও মেঘনাদের স্ত্রী। তাইতো তার দৃপ্ত উচ্চারণ- ‘আমি কি ডরাই, সখী, ভিখারি রাঘবে?’