দেশে জীবন-জীবিকা ও খাদ্যনিরাপত্তায় সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যার প্রভাব তুলে ধরতে কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত জরিপ চালাচ্ছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। ‘বাংলাদেশ: ডিআইইএম—ডাটা ইন ইমার্জেনসিস মনিটরিং ব্রিফ’ শীর্ষক দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক এ জরিপের সপ্তম ধাপের ফলাফল চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ হয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পরিচালিত জরিপের সপ্তম কিস্তির ফলাফলে উঠে এসেছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশী খানাগুলোর প্রায় অর্ধেকই খাদ্যের উচ্চমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকট বা ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ৪৮ শতাংশ খানা। এর আগে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত জরিপের ষষ্ঠ ধাপে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছিল মাত্র ১০ শতাংশ পরিবার। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে জরিপের ফলাফলে এ বড় পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মূল্যস্ফীতির এ ঊর্ধ্বমুখিতাকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা গোটা খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বিভিন্ন সময়ে দেশে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণ হিসেবে কভিডের প্রাদুর্ভাব-পরবর্তী অভিঘাত এবং আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে মূল্যের যুদ্ধসৃষ্ট অস্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। যদিও এফএও চলতি সপ্তাহেই প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক এখন দুই বছরে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। আবার কভিডের অভিঘাতজনিত ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটের প্রভাবও এখন আর তেমন একটা নেই বলে সংস্থাটির জরিপে উঠে এসেছে।
এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপের ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তির মাঝের সময়টিতে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুতগতিতে বেড়েছে। দেশের প্রতিটি বিভাগ ও হটস্পটে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক নানা সংকটের প্রভাব এখন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তুলনামূলক কমশিক্ষিত এবং কাঁচা ঘরবাড়ি ও পর্যাপ্ত শৌচাগার সুবিধার অভাব নিয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোর ওপর এসব প্রভাব তুলনামূলক অনেক বেশি। খানাগুলোর সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলেছে জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি।