তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানকে নয়া অটোমান সুলতান বলা যায় না আসলে। তাঁকেও তো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হতে হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় সম্মিলিত বিরোধী দলের সঙ্গে। নিঃসন্দেহে তিনি জাতীয়তাবাদী। তবে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব সত্ত্বেও শেষ বিচারে গণতান্ত্রিক। প্রধান বিরোধী নেতাকে তিনি জেলে পোরেননি, যদিও সংবাদমাধ্যমকে রেখেছেন কোণঠাসা করে। সদ্য সম্পন্ন নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও তুরস্কে গণতন্ত্র টিকে থাকত। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে কতটা সবল হতো– সেটা এক প্রশ্ন। এরদোয়ানের বিজয়ে গণতন্ত্র তো রক্ষা পেলই; তুরস্কের পরাশক্তি হয়ে ওঠার বাসনাও জোর পেল। বিজয়ের পরপরই তাঁর বক্তব্যের ভেতরে ছিল সেই ইঙ্গিত। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্র খর্ব না করেই আমরা তুর্কি শতাব্দীর দোর খুলেছি।
নিন্দুকেরা তো এবারেই এরদোয়ানের রাজনৈতিক কবর রচনা করে ফেলেছিলেন। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম আগাম তাঁর পরাজয়ের বার্তা দিয়ে শান্তির ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। সেই তিনিই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৫২ শতাংশের বেশি ভোটে জয়ী হয়ে এলেন। ৬৯ বছরের বৃদ্ধ জেনারেল লড়লেন তাঁর শেষ লড়াই।
অবশ্যই এরদোয়ান একজন পপুলিস্ট। পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী নেতা পাকিস্তানের ইমরান খানও। ভারতের নরেন্দ্র মোদিও একজন পপুলিস্ট নেতা। তবে পার্থক্য হলো, এরদোয়ান বা ইমরান তাঁদের জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতি দাঁড় করিয়েছেন জাতীয় স্বার্থের ভিতের ওপর। হিংসার রাজনীতি না করেই তাঁরা জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু ভারতে বিজেপির জনতুষ্টিবাদের মূল জ্বালানি হলো সাম্প্রদায়িক হিংসা ও ঘৃণা। এখানেই দুই ধরনের জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির পার্থক্য। জনতুষ্টিবাদী হলেই কেউ ডোনাল্ড ট্রাম্প বা নরেন্দ্র মোদি হবেন, তা নয়।