এই গ্রহে নদীই সর্বব্যাপী ক্ষত নিয়ে গড়িয়ে চলা এক জীবন্ত প্রাণসত্তা। বেঁচে থাকার জন্য কোনো জীবিত প্রাণের শরীরের সব অংশের সুস্থতাই জরুরি। অস্থি-মজ্জা-হাড়-মাংস কিংবা শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কিন্তু আমরা চারধারে কী দেখি। এই নদীর হাত নেই, তো ওই নদীর চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। কোনো নদীর কলিজা পিষে দেওয়া হয়েছে, কোনো নদীর শরীর থেকে ধড় আলাদা করা হয়েছে।
খুব কম নদীকেই আমরা মাথায় চুলের ডগা থেকে পায়ের নখ অবধি আপাদমস্তক সুস্থ খুঁজে পাব। নদীর জন্য সবচেয়ে কঠিন হলো উজান থেকে ভাটিতে গড়িয়ে চলার পথের ‘অতিসাধারণ নিরাপত্তা’। এটি কুসুম কুসুম ফুলের বিছানা বা মসৃণ মাটি কিংবা উত্তল পাথরের চাঁই নয়। কিংবা নদীর গড়িয়ে চলা পথের মামুলি নিরাপত্তার জন্য সমরাস্ত্র কারখানা বা জলপাই বাহিনীরও কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বা জাতিসংঘের কোনো বৈঠকেরও দরকার নেই। কেবল নদীর উজান থেকে ভাটিতে গড়িয়ে চলার পথকে বাধা না দিলেই হলো। কিন্তু এখানেই যত বগলবাজি, বাণিজ্য কিংবা বাহাদুরি।
যে যেভাবে পারছে এক একটা নদীতে উজান থেকে ভাটিতে সর্বত্র কুপিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে প্রতিদিন খুন-ধর্ষণ করে চলেছে। বিশেষ করে উজানে ও উৎসমুখে নদীগুলো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বৃহৎ অবকাঠামো কিংবা বৃহৎ বাঁধের কাছে বন্দি। উন্নয়নের এই কারাগার থেকে খুব কম জলধারাই মুক্তি পেয়ে ভাটিতে গড়ায়। অধিকাংশের নিয়তি হয় পায়ে ডান্ডাবেড়ি আর শেকল নিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গড়িয়ে চলা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপদে আছে আমাদের আন্তঃসীমান্ত অভিন্ন নদীগুলো। সবগুলোর উজানেই ভারতীয় অংশে তৈরি হয়েছে নানা স্থাপনা ও প্রকল্প। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এক অনন্য নদী ধলাই। এ নদীর উজানে ত্রিপুরা রাজ্যে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কারণে নদীটি প্রতিদিন পরিচয় ও অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। চলতি আলাপখানি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের কাছে ধলাই নদীর সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানায়।