ঋতুকাল ও সামাজিক ট্যাবু

সমকাল শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩, ০৭:০১

ময়না যখন ১১ বছর বয়সে তার প্যান্টিতে রক্তের ফোঁটা দেখেছিল, তখন সে ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ভেবেছিল তার ভয়াবহ কোনো অসুখ করেছে। দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে এই ভয়ের কথা বলেছিল। এর পরের সময়টা ছিল আরও কষ্টের। বাইরে যাওয়া, খেলাধুলা করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, স্কুলে যাওয়া সবকিছুই ময়নার জন্য হয়ে পড়েছিল চ্যালেঞ্জিং। এই স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন ও এর গুরুত্ব নিয়ে ময়নার মতো অধিকাংশ মেয়ের সঙ্গে পরিবারের কেউ খোলাখুলি কথা বলে না, পরামর্শ দেয় না। মাসিক বা ঋতুর সময়টা এখনও আমাদের সমাজে ট্যাবু। অপবিত্র ও নিষিদ্ধ এক বিষয়।


ঢাকা শহরের মেয়ে হয়েও কানিজ মাসিক চলাকালে নিজেকে অপবিত্র ভাবত। কারণ সব ধর্মীয় কাজে তার অংশগ্রহণ করা বারণ ছিল। এমনকি জায়নামাজও হাত দিয়ে ধরতে দেওয়া হতো না। মাত্র ২-৩ বছর আগেও মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটির যখন মাসিক শুরু হলো, তখন তাকে প্যাডের পরিবর্তে পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হতো, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। বাজারের হিসাবে প্যাড কেনাটা ছিল বাড়তি ব্যয়। তাই কানিজের মা, দুই বোন সবার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য– সেই পুরোনো কাপড় বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা।


কানিজ বা ময়না কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়, তারা আমাদের বন্ধু, বোন কিংবা আমরাই। যাদের মধ্যে অধিকাংশই কখনও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং যৌনজীবন নিয়ে কোনো তথ্য পায়নি। জানতে পারেনি এই মাসিকের সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্য, প্রজনন, গর্ভধারণ কতটা সম্পর্কিত। তাদের স্কুল, পরিবার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্পষ্টভাবে তেমন কোনো তথ্য দেওয়া হয় না। মাসিক চলাকালে যে তলপেটে ব্যথা হতে পারে, মাথাব্যথা হতে পারে, গা ম্যাজম্যাজ ও হাত-পা শিরশির করতে পারে, সেই ধারণাও কেউ দেয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১০ থেকে ১৯ পর্যন্ত কৈশোরকাল এবং এটাই বয়ঃসন্ধিকাল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনের মধ্যে ৩ কোটি ৪০ লাখ ২ হাজার ৮৫৭ জনই ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী, শতাংশের হিসাবে যা প্রায় ২০ শতাংশ। এ সময়ে মানুষের দেহ, মন ও বুদ্ধিবৃত্তিক যে পরিবর্তন ঘটে, তা একেবারেই অচেনা তাদের কাছে। এসব সমস্যা কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। অনেক প্রশ্ন তৈরি হয় শরীর ও মন নিয়ে; কিন্তু উত্তর পাওয়া যায় না।


আইসিডিডিআর,বি জানায়, বয়ঃসন্ধিকালে শিশুরা মা-বাবা অথবা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে নিরাপদ যৌনজীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো কথাই বলে না। অন্যদিকে অভিভাবকরাও বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করেন না। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এই ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে থাকা শিশুরা এমন একটা সমাজে বা গোষ্ঠীর মধ্যে বসবাস করে, যারা সনাতনী ধ্যান-ধারণা বিশ্বাস করে ও চর্চা করে। তারা কোনোভাবেই কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে যৌনজীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনাকে গ্রহণ করে না; বরং এ বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনও ভয়াবহভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। মাসিক, মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা, প্রজনন স্বাস্থ্যতত্ত্ব, যৌনতা, পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌনবাহিত রোগ নিয়ে আলোচনা করাটা দেশের প্রায় সব ধরনের পরিবারেই গর্হিত কাজ বলে সামাজিক ট্যাবু চালু রয়েছে। অথচ যখন কোনো শিশু-কিশোরের মনে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন সে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে নানাভাবে। পাড়া-প্রতিবেশী বা বন্ধুদের কাছ থেকে, ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য, যা সবসময় যথেষ্ট হয় না; বরং মাঝেমধ্যে ভুলও হয়। পথশিশু, দরিদ্র ও বস্তিবাসী অগণিত শিশু তথ্যজালের বাইরেই থেকে যায় সারাজীবন। বয়ঃসন্ধিকালের শিশু-কিশোররা খুব আবেগনির্ভর হয়। তারা ঝুঁকি নিতে ভালোবাসে। মাসিক, শরীরের পরিবর্তন, প্রেম, ভালোবাসা, দৈহিক সম্পর্ক, বৈবাহিক জীবন ও দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান ধারণের মতো বিষয়গুলো এই বয়সীদের খুবই শঙ্কার মধ্যে ফেলে দেয়। এর জের ধরে অনেকেই আত্মহত্যা করে, হতাশায় ভোগে, মনোবৈকল্যের রোগী হয়। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে শতকরা ৫৯টি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। শতকরা ২২ জনের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। সেখানে কিশোরীরা তাদের ঋতুকালীন, এর বিভিন্ন দিক, প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌনজীবন সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়েই বয়স্ক স্বামীর সহবাসের সঙ্গী হতে বাধ্য হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us