ইট-পাথরের শহর ছেড়ে দুনিয়াজুড়ে অনেক মানুষই এখন ফিরে যেতে চাইছেন প্রকৃতির কাছে। অনেকে সেটা পারছেনও। যাঁরা যেতে পারছেন, যাঁরা যেতে চাইছেন—সবাই হাজার বছরের চিরায়ত প্রকৃতির সঙ্গে বাকি জীবন উদ্যাপন করতে চান। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি পাতানোর এমনই এক আকর্ষণীয় গন্তব্য নিশ্চয়ই সুন্দরবন। অথচ এখানে বাস করেও মাতৃত্বের মতো একটি চিরপ্রাকৃতিক ক্ষমতা হারাতে বসেছেন এখানকার মায়েরা।
সুদূর অতীতের নানা ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে শুরু করে সিডর-আইলা কিংবা আম্পান-ইয়াস থেকে জনপদকে বাঁচাতে বুক আগলে দাঁড়িয়েছিল সুন্দরবন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সেই শ্বাসমূলীয় বনও যেন লোনাজলের সামনে অসহায়।
সম্প্রতি একটি যাত্রায় আমি এক সপ্তাহ থেকেছি সুন্দরবনের এক গহিন গ্রাম কালাবগীতে। বিলীয়মান এই গ্রাম শিগগিরই হয়তো হারিয়ে যাবে লোনাপানিতে। প্রকৃতি কেবল বসতভিটা কেটে নিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। বরং বসত হারানোর আগে যা যা সম্ভব, সবকিছুই যেন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের কাছ থেকে।
যার মধ্যে শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধার সুযোগের মতো বিষয়েই কেবল সীমাবদ্ধ থাকছে না। কেড়ে নিচ্ছে নারীর জরায়ুকেও।
কালাবগীর সপুরা খাতুনের কথাই বলা যাক। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও এসএসসি পরীক্ষা তার দেওয়া হয়নি। কারণ তার মায়ের জরায়ুর অসুখের পেছনে অনেক টাকা খরচ করা এই পরিবার তার পরীক্ষার খরচ জোগাতে পারছে না।
সপুরা বলছিল, ‘সিট পড়িছে চালনায়। এখানতে ট্রলারে যাতি তিন ঘণ্টা। যায়ে আইসে তো পরীক্ষা দিয়া সম্ভব না। ওইখানে থাকতি হয়। এক মাসের বাসা ভাড়া করা লাগে। বাপ মার এত টাকা কই। মাসিকির সমস্যা, জরায়ুর অসুখ নিয়ে অনেক টাকা খরচ করিছে। এই পর্যন্ত পড়তি দেসে, তাই কত!’