হিন্দু নারীর বিবাহ নিবন্ধন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক এবং সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার ইত্যাদি সুরক্ষায় যথাযথ নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগতভাবে কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না– জানতে চেয়ে সম্প্রতি উচ্চ আদালত রুল দিয়েছেন। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতেই এই রুল। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং আরও বিতর্কের অবতারণা হতে পারে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। অবশ্য এ সংক্রান্ত বিতর্ক এই প্রথম নয়; ঐতিহাসিক কাল থেকেই তা অব্যাহত।
২০১৭ সালে আইন মন্ত্রণালয় হিন্দু আইন সংস্কারের যে প্রস্তাব দেয়, তার মূল বিরোধিতাকারী ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং তাঁরা সবাই পুরুষ। বৈষম্যপূর্ণ ধর্মীয় আইনের সমালোচনা হিন্দু নারীরাও যে প্রকাশ্যে করতে পারেন, তা নয়। ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক নীতিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের সমাজজীবন শেষ পর্যন্ত ধর্ম দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত এবং তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইসলাম ধর্মভিত্তিক আইনে পারিবারিক পরিসরে নারীদের আংশিক অধিকার থাকলেও তা কিছুতেই সমান অধিকার নয়। আর আমরা দেখতে পাই পিতৃতন্ত্র সে আইনকেও উপেক্ষা করে। প্রথা মেনে ভাইদের ইচ্ছার আলোকেই বোনেরা পিতার সম্পত্তি পায় অথবা পায় না। এর আরও একটি দিক আছে। মুসলমান নারীরা স্থাবর সম্পত্তিতে যেটুকু অধিকার পায়, তার ওপর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ পরিবারিকভাবে সম্পর্কিত কোনো না কোনো পুরুষেরই হাতে থাকে। এমনকি বাংলাদেশে বসবাসরত কোনো কোনো আদিবাসী, যেমন গারদের সম্পত্তির মালিকানা নারীর হাতে থাকলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় পুরুষেরই আধিপত্য বাস্তবে বিরাজমান। উল্লেখ্য, বৌদ্ধ নারীদের অনুসরণ করতে হয় আলোচ্য হিন্দু আইন। মোট কথা, পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইনের ভিন্নতার কারণে একটু রকমফের থাকলেও সাধারণভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর নারীই অধিকারবঞ্চনার শিকার।