বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের পরবকে ম্রোরা বলে চানক্রান। চৈত্র-বৈশাখে যখন বিজু, বিষু, সংক্রান্তি, সাংগ্রাই, নববর্ষ, হংঅরানী কিংবা বৈসুক হয়, তখনই ম্রো গ্রামে আয়োজিত হয় চানক্রান। শাল ফুল ফুটলে যেমন সাঁওতাল সমাজ বাহা পরবের আয়োজন করে; ক্লো-প্লাও ফুটলে ম্রোরা আয়োজন করে চানক্রান। চানক্রানের আগে ম্রো ছেলেমেয়েরা পাহাড়-জঙ্গল থেকে ক্লো-পাও ফুল সংগ্রহ করে। কিন্তু বান্দরবানের লামার সরই পাহাড়ে গত ২০ বছরে কমেছে ক্লো-পাও ফুলের বিস্তার। অবশ্যই পরিবেশদূষণ কিংবা জলবায়ু বিপর্যয় আছে। কিন্তু সরই পাহাড়ে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা তৈরি করেছে মানুষ।
সরই ইউনিয়নের লেমুপালং মৌজার চাইল্যা ঝিরির পাশে তিনটি ম্রোপাড়া। পুরাতন ও নতুন দেওয়ানপাড়া এবং বাক্কাপাড়া। পাড়াবাসী অভিযোগ করেছেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে তাদের সংরক্ষিত পাড়াবন থেকে গাছ কেটে নিচ্ছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার এক কাঠ ব্যবসায়ী। ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি সরই পাহাড়ের লেমুপালং মৌজায় ম্রোদের সামাজিকভাবে সংরক্ষিত পবিত্র ‘মৌজা রিজার্ভ বা পাড়াবন’ বিনষ্ট করেছেন এবং প্রথাগত রীতি ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে সেখানকার গাছ কাটছেন। প্রতি বছর জানুয়ারি মাস এলেই তাঁর ভাড়া করা ৫০-৬০ জন বহিরাগত শ্রমিক মেশিনপত্র নিয়ে গাছ কাটতে চলে আসে এবং বর্ষাকালের আগ পর্যন্ত গাছ কাটে। ঘনফুটের মাপে জোয়ান গাছগুলো কাটা হয়, কিন্তু চিরতরে বিনাশ হয় লতাগুল্ম ও বাস্তুতন্ত্র। হাতি দিয়ে গাছ টানানোর নির্মম কাজটিও চলে এখানে। দৈনিক সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়ায় হাতিগুলো আনা হয়। কাটা গাছ টানতে টানতে শরীরে ঘা আর ক্ষতঅলা হাতির আহাজারি শুনতে পায় না কোনো বিভাগ কিংবা মন্ত্রণালয়।
গাছ পরিবহনের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ওই এলাকার ঝিরি ও পাহাড় কেটে-ছেনে তছনছ করা হয়েছে। কেবল পাড়াবন নয়, এলাকাবাসী নিজেদের বড় করা গাছ প্রয়োজনে এই ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারও কাছে বিক্রিও করতে পারে না। এ এক জটিল সিন্ডিকেট। কম দামে বিক্রি করে সেই টাকা পেতে অপেক্ষা করতে হয় বহু সময়। তবে সেই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জোত-পারমিটের মাধ্যমে মৌজাপ্রধান থেকে আজীবনের জন্য এই বাগান তিনি কিনেছেন এবং গাছ কাটা ও হাতি দিয়ে গাছ টানানো বৈধভাবেই করছেন।