শেষ পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কও বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ‘আপনি যদি মুদ্রাকে অস্ত্র হিসেবে বারবার ব্যবহার করেন, তাহলে অন্য দেশগুলো এর ব্যবহার বন্ধ করে দেবে’—ঠিক এভাবেই বলেছেন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের ব্যবহার কমছে, একজন অর্থনীতিবিদ এমন মতামত দেওয়ার পর এক টুইটে টেসলা আর টুইটারের মালিক এ মন্তব্য করেন। ‘ডি-ডলারাইজেশন’ বা আর্থিক ব্যবস্থা ‘ডলারমুক্ত’ করার বিষয়ে বিশ্বজুড়ে যে আওয়াজ উঠেছে, সে ব্যাপারে মতামতটি দিয়েছিলেন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পিটার সেইন্ট অনজ।
পিটার সেইন্ট অনজ মনে করেন, ‘ডি-ডলারাইজেশন এখন বাস্তব এবং এটি খুব জোরেশোরেই ঘটছে।’ একটি হিসাবও দেন তিনি। বিশ্বে রিজার্ভ মুদ্রাব্যবস্থায় ২০০১ সালে যেখানে ডলারের অংশ ছিল ৭৩ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। আর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই হার আরও কমে হয়েছে ৪৭ শতাংশ। বলা হচ্ছে, গত দুই দশক আগের তুলনায় ডি-ডলারাইজেশন এখন ১০ গুণ দ্রুতগতিতে ঘটছে।
ডলার নিয়ে এসব আলোচনা-বিতর্ক জোরালো হয়েছে শীর্ষস্থানীয় মুদ্রাবিশেষজ্ঞ স্টিভেন জেনের বক্তব্যের সূত্র ধরে। এপ্রিল মাসে তিনি একটি গবেষণা নোট প্রকাশ করে বলেন, রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ২০২২ সালে ডলারের ‘বিস্ময়কর পতন’ ঘটেছে। আর এর জন্য তিনি দায়ী করেন নিষেধাজ্ঞা আরোপকে। স্টিভেন জেন সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউরিজন এসএলজের প্রধান নির্বাহী। তিনি ‘ডলার স্মাইল’ তত্ত্বের জনক। মার্কিন অর্থনীতি খুব শক্তিশালী কিংবা খুব দুর্বল থাকলে ডলারের মূল্য বাড়ে—এ–ই হলো ওই তত্ত্বের মোদ্দাকথা। তিনিই প্রথম বলেন, বিনিময় হারের উত্থান–পতনকে বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, গত বছর বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের হিস্যা ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে অবশ্য বিশ্বে এখনো ৫৮ শতাংশের বেশি রিজার্ভ মার্কিন ডলারে রাখা হয়। তবে ডলারের হিস্যা যে কমছে, তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। এমনকি আইএমএফ ডলারে রাখা রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে, তা–ও ১৯৯৯ সালের পর সবচেয়ে কম।