‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’—এই বাণী ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ শিক্ষক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন করেছিলেন গত শতকের দ্বিতীয় দশকে। তাঁরা জ্ঞানচর্চার যে শিখা প্রজ্বালন করেছিলেন, তার পথ ধরেই এ দেশে সব গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে ওঠে।
সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ কতটুকু আছে? গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়—সেন্টার ফর জেনোসাইড ও অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক পদে ছিলেন তিনি। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে তিনি কোনো একাডেমিক কাজে যুক্ত হতে পারবেন না।
অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন। ইমতিয়াজের বইয়ের নাম হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন। এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য—গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের কারণে রাষ্ট্রের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। যেমন একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি সেনাদের বিচার করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু যে সন্তান বাবাকে হারিয়েছেন, যে স্ত্রী স্বামীকে হারিয়েছেন, যে বোন ভাইকে হারিয়েছেন, তাঁর ক্ষত ও বেদনা কোনোভাবে মুছে ফেলা যায় না। বইয়ে গণহত্যার বিশ্লেষণের পাশাপাশি ইমতিয়াজ ১৫ জন শহীদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইমতিয়াজ বলেছেন, ‘যে বই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কীভাবে সম্ভব?’
ইমতিয়াজ আহমেদ কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিসের পরিচালক ছিলেন না, এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তাও। আন্তর্জাতিক একাডেমিক পরিমণ্ডলে জেনোসাইড সেন্টার যে পরিচিতি পেয়েছে, এর পেছনও ছিল তাঁর নিরন্তর প্রয়াস। এই সেন্টারের পরিচালক থাকাকালে তিনি বেশ কিছু সেমিনারের আয়োজন করেছেন।